কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের ভাষণে একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য কর্মী এবং চিকিৎসকদের করোনাভাইরাস টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে যারা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করেছেন সেই সব কর্মীদেরই টিকা প্রদান করা হবে। তবে এই রাজ্যে টিকাকরণের শুরুতেই তৈরি হল বিতর্ক৷ স্বাস্থ্য কর্মী না হওয়া সত্ত্বেও টিকা নিলেন প্রাক্তন ও বর্তমান সহ ৩ তৃণমূল বিধায়ক-সহ একগুচ্ছ রাজনৈতিক কর্মী৷ টিকা নিয়েছেন বিডিও৷
শুরুতে বিতর্ক৷ করোনার ভ্যাকসিন নিলেন দুই তৃণমূল বিধায়ক ও এক প্রাক্তন বিধায়ক৷ আজ সকালে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে টিক নেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ এরপর আচমকা হাসপাতালে যান কোটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা পুরপ্রশাসক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়৷ স্বাস্থ্যকর্মী না হওয়া সত্ত্বেও তিনি টিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হওয়ার তাঁর নাম তালিকায় ছিল, সেই সুবাদে তিনি টিকা নিয়েছেন বলে দাবি তৃণমূল বিধায়কের৷
অন্যদিকে ভারতের স্টেট জেনারেল হাসপাতালে টিকা নেন ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল ও প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরা৷ তাঁরা দু’জনে হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হওয়ার কারণে টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক৷ অন্যদিকে টিকা নিয়েছেন বাগদার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়৷ টিকা নিয়েছেন বাগদার বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার৷ কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মী না হওয়া সত্ত্বেও বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিধায়কদের ভ্যাকসিন নেয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ কেননা স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র৷ সেই বিধি উড়িয়ে এহেন ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ বিধায়ক হওয়ার সুবাদে হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত রয়েছেন বিধায়করা৷ সেই পদকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল বিধায়কদের একাংশের ভ্যাকসিন নেওয়ার ঘটনা নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷
অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ারের করোনাভাইরাস টিকা প্রাপকদের তালিকায় এক নম্বরে ছিল তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীর নাম! এই নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। যদিও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, জেলা সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম তালিকায় রয়েছে। করোনা যোদ্ধা হিসেবে তিনি টিকা পেতেই পারেন। এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বাদানুবাদ শুরু হয়ে গেছে বঙ্গে। বিজেপির তরফ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম লঙ্ঘন করে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটা একেবারেই অনৈতিক, মেনে নেওয়া যায় না। যদিও আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক যা বলেছেন তাতে এক প্রকার বিধায়কের করোনাভাইরাস টিকা প্রথমে পাওয়া নিশ্চিত। তবে এই ঘটনা নিয়ে যে বিতর্ক আরো গভীরে যাবে তা বলাই বাহুল্য। একই রকম কথা বলছেন খোদ তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীও। তিনি জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সামনের সারিতে দাঁড়িয়েই মানুষের পাশে থেকে সবাইকে সাহায্য করেছেন তিনি। সেই কারণেই স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁর নাম তালিকায় প্রথম রেখেছে। যদিও সাধারণ মানুষ যখন টিকা নেবেন তখনই তিনি টিকা নেবেন, তার আগে নয়। এমনটাই তিনি জানিয়েছেন।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের একবার বলেন, যাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি তারাই আগে টিকা পাবেন। একইসঙ্গে প্রথম টিকা লাগানোর পর দ্বিতীয় টিকা কখন লাগবে সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পৌঁছে যাবে গ্রহীতার মোবাইল ফোনে। এদিন দেশবাসীকে আরো একটি ব্যাপারে স্পষ্ট করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। একটি নিয়ে অপরটি ভুলে গেলে কখনই চলবে না। দুটি ডোজের মধ্যে কমপক্ষে এক মাসের অন্তর রাখা হবে। দ্বিতীয়বার টিকা নেওয়ার ১৪ দিন পরেই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করবে ভ্যাকসিন, বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।