কলকাতা: নানা কারণে রাজ্যে প্রায় ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকা তথা শিক্ষক সংগঠন এই ব্যাপারে নবান্ন, হাইকোর্ট, স্থানীয় বিধায়কদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আবেদন জানালেও সরকারের তরফ থেকে এই ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই অবশেষে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিকের স্তরের চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশ না হলে তাঁরা পথে নামবেন।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ বা ডবলুবিইউপিসিপিএম -এর সহ সভাপতি সুশান্ত ঘোষের কথায়, রাজ্যে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগের যে অচলাবস্থা চলছে, তার দ্রুত সমাধান চাইছেন তাঁরা। রাজ্য সরকার তথা শিক্ষা দফতর ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে তাঁরা দাবি করেছেন, সমস্ত বিধি মেনে দ্রুত ১:১.৪ অনুপাতে রাজ্যের সমস্ত উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে রাজ্য সরকারকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে ডবলুবিইউপিসিপিএম।
এই নিয়ে দীর্ঘদিন হাইকোর্টে মামলাও চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি করোনার জেরে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় সেই মামলার শুনানিও থমকে গিয়েছিল। দু'মাস আগে আমফানের পরবর্তী সময়ে রাজ্যের শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠন গুলি এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি ফেরাতে অভিনব উপায় বের করেছিলেন। রাজ্যে আমফানের ভয়াবহ ঝড়ে একাধিক গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। সেখানেই বৃক্ষরোপনের পাশাপাশি তাঁরা তাঁদের দাবি জানিয়েছিলেন সরকার ও আদালতের কাছে। তাঁরা সেখানে দ্রুত মামলা শুরু করার আবেদন করেছিলেন। এমনকি রাজ্যের বিধায়ক এবং সাংসদদের কাছে তাঁরা ডেপুটেশনও জমা দিয়েছিলেন।
শনিবার, শিক্ষক দিবসের দিন রাজ্যের জেলায় জেলায় উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর দাবিতে নানা কর্মসূচি নিয়েছিলেন 'ডবলুবিইউপিসিপিএম' সদস্যরা। পাশাপাশি এদিন সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক বিলি করেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় শেষ বারের মতো প্রথম আবেদন নেওয়া হয় ২০১৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে। তারপর ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়। টেটের ফলাফল বের করা হয় ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ইন্টারভিউ পর্ব শুরু হয়েছিল ২০১৯ এর জুলাই মাসে। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রভিশনাল মেরিট লিস্ট সেই বছরেই প্রকাশ করা হয়েছিল কিন্তু এখনও পর্যন্ত আপার প্রাইমারি বিভাগে কোনও নিয়োগ করা হয়নি। এদিকে আবেদনকারীদের অতিমারির মধ্যে বেকারত্বের জ্বালা নিয়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।