কলকাতা: গ্লোবাল ওয়ার্মিং। গোটা বিশ্বের সামনে এ এক ভয়ঙ্কর সঙ্কট। তবে উদ্বেগের এখানেই শেষ নয়৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ওয়ার্মিং’ স্তর পেরিয়ে ‘বয়েলিং’ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের জলবায়ু। অর্থাৎ পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা যা ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ নামে পরিচিত, সেটাই এক ধাপ এগিয়ে এখন অবস্থান করছে ‘গ্লোবাল বয়েলিং’ স্তরে। ফলে বলাই যায়, আমাদের এই পৃথিবী এখন ফুটছে বিশ্ব। উষ্ণায়নের যাত্রা শেষে শুরু হয়ে গিয়েছে ফুটন্ত যুগ। তবে কি ধ্বংসের পথে পৃথিবী? আগামী নিয়ে সতর্ক করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস৷
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি সম্মেলন থেকে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন আন্তোনিও। তাঁর কথায়, চলতি মাসে অর্থাৎ এই জুলাইয়ে গোটা বিশ্বে যে বিধ্বংসী তাপমাত্রা দেখা গিয়েছে, তা থেকেই স্পষ্ট যে পৃথিবী একটি উষ্ণতার পর্যায় থেকে ফুটন্ত যুগে চলে গিয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ জুড়ে যেভাবে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগের। রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রধানের কথায়, ‘গোটা বিশ্বের জন্যেই এটি একটি বিপর্যয়!’ তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী যে দিনগুলি আসতে চলেছে, তাতে বিগত সব রেকর্ড ভেঙে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহৎ জলবায়ুর পরিবর্তন। ভয়ঙ্কর। এটি সবেমাত্র শুরু। বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগ শেষ হয়ে বিশ্ব ফুটন্ত যুগ এসেছে।’ রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রধানের কথায় মিলেছে অশনি সঙ্কেত৷
আন্তোনিও এদিন অতীতের কথা মনে করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভয়ঙ্কর রূপ যে বিশ্ববাসীকে একদিন দেখতে হবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন৷ তাঁরা সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববাসী পারেনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে৷ তাঁদের সাবধানবানী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, যে গতিতে এই পরিবর্তন হচ্ছে, তা বিস্ময়কর। পৃথিবীর আগামী পরিণতি ‘দুঃখজনক’ বলেও উল্লেখ করেছেন গুতেরস৷ এদিন জ্বালানি নিয়েও নতুন করে ভাবনাচিন্তার কথা বলেন ইউএন প্রধান৷
দিন কয়েক আগে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছিল, গত ১০০ বছরের তথ্য বলছে, এর আগে কখনও এতটা তপ্ত হয়নি এই পৃথিবী। এর আগে জুলাই মাস এতটা গরম হয়নি। ইউরোপে ব্যাপক তাপপ্রবাহ, গোটা সুমেরু ও ইউরেশিয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এর জন্যেই গায়ে জ্বালাপোড়া ধরেছে৷ এর আগে প্রায় একই কথা জানিয়েছিল ইউরোপের ‘কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’।
প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ জলস্রোত এল নিনোর দাপটে ২০২৩ সালে এমনিতেই সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ক্যালিফর্নিয়া এবং টেক্সাসে তাপপ্রবাহ চলছে। আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলেই পূর্বাভাস মিলেছে৷ ক্যালিফর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছে৷ বিভিন্ন জায়গায় দাবানল ছারখার করে দিয়েছে। কানাডার কিছু অঞ্চলেও দাবানল দেখা গিয়েছে।