কলকাতা: মহালায়া হয়ে গিয়েছে। নিয়ম মতে একটু দেরী করেই এবার আসছেন মা। ২০২০ সালের শুরু থেকেই সময়টা ভালো কাটছে না। অতিমারীর মধ্যে বাঙালির প্রাণের পুজোয় ছেদ পড়বে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল৷ হয়ত প্রতিবারের মতো এবারে শহরে থাকবে না তেমন জাঁকজমক, কিন্তু বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবারেও দুর্গাপুজোর সূচিতে এতটুকুও বদল আসবে না৷ তবে, মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি৷ করোনা মহামারিও আটকাতে পারবে না বাঙালির আবেগকে৷
পুজোর আগে কুমোরটুলির চেনা ছবি প্রথম দিকে এক না থাকলেও এবার ক্রমশ ভিড় জমতে শুরু করেছে সেখানে৷ প্রতি বছরের মতো এবারেও ক্যামেরা হাতে বা কাঁধে নিয়ে ফটোগ্রাফারদের ভিড় জমছে সেখানে৷ করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে কুমোরটুলির সকল মৃৎশিল্পী, তাঁদের পরিবার এবং যাঁরা সেখানে প্রতিনিয়ত যাচ্ছেন তাঁদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা ভেবে কুমোরটুলির দুই প্রবেশদ্বারে দুটি স্যানিটাইজিং টানেল বসানো হয়েছে৷ এই টানেলে স্যানিটাইজ হয়েই ভিতরে ঢুকতে পারবেন কুমোরটুলিতে আগতরা৷ পাশাপাশি কুমোরটুলির ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকার চারিদিকে মোট ৬টি বায়োটয়লেট বসানো হয়েছে৷
কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির সদস্য সুজিত পাল সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কুমোরদের কোয়ার্টারে হাত ধোয়ার জন্য বড় জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত করোনা মুক্ত কুমোরটুলিতে একাধিক উৎসুক লোকজন ভিড় করছেন৷ পুজোর আর মাত্র বাকি একটা মাস৷ দর্শনার্থী ও মৃৎশিল্পীদের কথা ভেবে একটি কর্পোরেট সংস্থা ও একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এই স্যানিটাইজিং টানেল, বায়োটয়লেট ও হাত ধোয়ার জন্য বড় জায়গা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এতে উপকৃত হয়েছে প্রায় ২০০ মূর্তি তৈরির সংস্থা৷’’
সুজিত পালের কথায়, নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে বলা হচ্ছে কুমোরদের। পাশাপাশি মাইকিং এর মাধ্যমেও প্রতিদিন প্রচার চলছে। অন্যান্য বছরের থেকে ৪০ শতাংশ কম মূর্তি তৈরির বায়না পেয়েছেন শিল্পীরা। লকডাউনের জেরে যেসমস্ত কর্মী-শিল্পীরা বাড়ি চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনও ফিরতে পারেননি। ইতিমধ্যেই কুমোরটুলির একাধিক প্রতিমা বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাজো সাজো রব এখন কুমোরটুলিতে। করোনা ভাইরাসের চিন্তায় প্রথম দিকে কপালে ভাঁজ পড়লেও বর্তমানে কম হলেও হাসির রেখা ফুটছে কুমোরটুলিতে৷
পুজোর আনন্দে কোনও ভাবেই ভাগ বসাতে পারবে না করোনা৷ তৃতীয়া থেকে খুলে যাবে পুজোমণ্ডপ৷ সারা রাত ঠাকুর দেখা যাবে৷ তবে বিধিনিষেধ পালন করতেই হবে৷ লকডাউনের পর এই প্রথম বৃহস্পতিবার সাধারণ জনতার এসে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে থেকে কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে করেন ৫০ হাজার টাকা৷ পুজো কমিটিগুলিকে বললেন, অঞ্জলির জন্য প্রত্যেককে আলাদা আলাদা দাঁড় করাতে হবে৷ একই ব্যবস্থা থাকবে প্রসাদ বিতরণে৷ সিঁদুর খেলা হবে ২-৩ ভাগে, আলাদা সময়ে৷ বিসর্জনের শোভাযাত্রা করা যাবে না৷ হবে না রেড রোডের সরকারি কার্নিভাল৷