গাছকেই ভাই ফোঁটা, পরিবেশ বাঁচাতে অভিনব বার্তা কোচবিহারে

গাছকেই ভাই ফোঁটা, পরিবেশ বাঁচাতে অভিনব বার্তা কোচবিহারে

tree

কলকাতা: পাঁচ দিনের দীপাবলি উৎসবের শেষ লগ্নে আসে ভাই ফোঁটা। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিন  বোনেরা তাঁদের ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে যমের দুয়ারে কাটা দেয়৷ ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনা করে তাঁদের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা জানায় বোনেরা। দেশজুড়ে মহা সমারোহে পালিত হয় ভাই ফোঁটা বা ভাই দুজ৷ কেউ কেউ আবার উৎসবকে ভাই টিকা, যম দ্বিতিয়া এবং ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া বলেও অভিহিত করে থাকেন৷ তবে এই বছর অন্য এক ভাই ফোঁটার সাক্ষী থাকল কোচবিহার৷ পরিবেশ বাঁচাতে আস্থা ফাউন্ডেশনের তরফে নেওয়া হল অভিনব এক উদ্যোগ৷ 

শুধু ভাইয়ের কপালে নয়, এবার বোনেরা ফোঁটা দিল গাছকে৷ সেই সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া হল পরিবেশ রক্ষার বার্তা৷ সকলের কাছেই আর্জি, সমাজকে সুস্থ রাখতে আপনারা গাছ লাগান৷ কারণ একটি গাছ একটি প্রাণ৷ ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ায় এটাই সকলের হোক সংকল্প৷ এদিন সকাল থেকে উপবাস থেকে গাছরূপী ভাইকে ফোঁটা দেন বোনেরা৷ স্টেশন চৌপতি তুফানগঞ্জ রোডে প্রাচীন তল্লি গাছে এবং কোচবিহারের শাল বাগানে ভাই ফোঁটা পালিত হয়। সেই উপলক্ষে এদিন সাজিয়ে তোলা হয়েছিল মহীরুহদের৷ গাছের গোড়ায় ফুল ছিটিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন বোনেরা৷ কোথাও আবার গাছের গায়ে জড়ানো কাপড়ে ছোট ছেলের ছবির জুড়ে দেওয়া হয়৷ তার পর ক্যাডবেরি, চকোলেট দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় গাছের গুড়িগুলিকে৷ সব মিলিয়ে গোটাটাই ছিল বেশ নজরকাড়া৷ 

আস্থা ফাউন্ডেশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘দিদি বা বোনেরা আজ ফোঁটা দিলেন৷ তবে গাছ রক্ষার দায়িত্ব সবারই৷ আজ একটি বিশেষ দিন৷ গাছকেও নিজের ভাই বানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করা যায়৷ গাছ বাঁচলে বাঁচবে প্রাণ৷ সেই বার্তা দিয়ে আমিও ফোঁটা দিলাম৷’’

কংক্রিটের জঙ্গল যত বেশি করে ডানা মেলছে, ততই যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন৷ যেভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে ধ্বংসের মুখে ঢলে পড়ছে এই পৃথিবী৷ সেই ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতেই আজকের এই উদ্যোগ৷ উদ্যোক্তাদের বার্তা, অযথা গাছ কাটবেন না, ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে৷ গাছে ফোঁটা দিয়ে সে কথাই পৌঁছে দিলেন প্রিয়াঙ্কা রায়, পিংকি রায় প্রিয়া সরকার, অর্পিতা শর্মা এবং শংকর রায়রা৷ 

বৃক্ষলতা পৃথিবীর আদি সন্তান৷ কিন্তু সভ্য মানুষের আধুনিকতার উত্তোরণে বলি হচ্ছে তরুলতার জগৎ৷ তবে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন শুধু গাছেদেরই বিনাশ করছে না, মানব জীবনেও বয়ে আনছে বিপদের অশনি সঙ্কেত৷ এই পৃথিবী বৃক্ষশূন্য হলে, ধ্বংস হবে মানুষের বাস৷ গাছেই লুকিয়ে আমাদের প্রাণ-প্রদীপ৷ তাই আর বৃক্ষহনন নয়৷ বরং গাছ বাঁচানোই হোক মানবজাতীর ধর্ম৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =