কলকাতা: পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সভার পর যথারীতি উদ্বেগ বেড়েছে শাসকদলের। সরাসরি দল ছাড়ার ইঙ্গিত না দিলেও তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। যার পর স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠা বেড়েছে রাজ্য রাজনিতিতে। তবে শুভেন্দুর সঙ্গে যে আলোচনায় বসবে তৃণমূল তা আজকেই জানিয়ে দেওয়া হল। জানালেন, সৌগত রায়।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শুভেন্দুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল এই সপ্তাহে। ওর যা বক্তব্য শুনেছি, সেগুলো মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শুভেন্দুর সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনায় বসার কথা আছে। এনিয়ে আলাদা করে সুদীপের সঙ্গেও আলোচনা করব। তখনই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘শুভেন্দুর বক্তব্য আছে, কিন্তু কোনো ডিমান্ড নেই, সে ব্যাপারে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। আমার শুধু দায়িত্ব ছিল শুভেন্দুর কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া, সেটা আমি জানিয়ে দিয়েছি।’ এদিকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ’শুভেন্দু আমাদের দলের এখনো একজন অন্যতম যোদ্ধা এটুকু বলতে পারি’। বেশি কিছু এ ব্যাপারে বলতে চাননি তিনি।
এদিকে তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের অন্য এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিঙই বলেন, ‘ উনি যা চান তাই করতে পারেন, অ-রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতেই পারেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, এটা কোন রাজনৈতিক ব্যাপার নয়। উনি আমাদের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, রাজ্যের মন্ত্রী সভার একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। উনি আমাদের সঙ্গেই আছেন। উনি যে দলে থেকে অখুশি আছেন এই ব্যাপারে আমি শুনিনি। উনি একটা কেন, অনেকগুলো অরাজনৈতিক সভা করতে পারেন সে বিষয়ে কারো কিছু বলার নেই। আর উনি যে দলে খুশি নন সে ব্যাপারে আমি এর আগে কখনো শুনিনি, এখনও কিছু জানি না।’
উল্লেখ্য, আজকের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আজ ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন। তাঁর মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য দেওয়ার সময় এক সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি দল পরিবর্তন করব কিনা। আমি তাঁকে বললাম, আজকের মঞ্চ রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, এখান থেকে এই ধরনের আলোচনা করা যায় না। আমি এখনো একটা দলের প্রাইমারি মেম্বার, সক্রিয় সদস্য। আমি এখনো একটা মন্ত্রিসভার সদস্য, মুখ্যমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী রেখেছেন। উনিও আমাকে তাড়াননি, আমিও ছাড়িনি। রাজনৈতিক কথাবার্তা দলের ভিতর থেকে, মন্ত্রিসভার ভিতর থেকে বলা যায় না। আমরা এত আনেথিক্যাল কাজ করি না’। শুভেন্দুর কথায়, বহুদলীয় গণতন্ত্রে সময় সময় বিভেদ হয়, বিভেদ থেকে বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু যতক্ষণ কেউ দলে আছেন, কেউ মন্ত্রিসভায় আছেন, তাঁকে যখন নিয়ন্ত্রকরা তাড়াননি, তিনি নিজেও ছাড়েননি, তাই ততক্ষণ এসব কথা মঞ্চ থেকে বলা যায় না। একেবারে নীতি এবং আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কাজ করার লোক তাঁরা নন বলে জানান রাজ্যের মন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশে আসা নিয়ে যে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছিল তার দায় অন্যদের। শুভেন্দু অধিকারী স্থান, কাল, পাত্র, ব্যানার জানে।’ তিনি স্পষ্ট করেন, আজকে এখানে সমবায়ীদের মেগা শো হল, সমবায়ের পতাকার নিচে, সমবায়ের ব্যানারে, এত মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠান হল। এক কথায় এই ধরনের মন্তব্য করে একদিকে যেমন রাজনৈতিকভাবে জবাব দিলেন শুভেন্দু, অন্যদিকে বলা যায় পরোক্ষভাবে জল্পনা বজায় রাখলেন।