৫৫ দিন পর অবশেষে গ্রেফতার সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শাহজাহান শেখ

৫৫ দিন পর অবশেষে গ্রেফতার সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শাহজাহান শেখ

কলকাতা: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে গ্রেফতার সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শাহজাহান শেখ৷ ৫৫ দিন পর খোঁজ মিলল ‘পলাতক’ তৃণমূল নেতার৷ মিনাখাঁ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শাহজাহানকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালতের লকআপেই রাখা হয়েছে তাঁকে। আজ, বৃহস্পতিবারই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে। বিঘার পর বিঘা জমি ও ভেড়ি দখল, নারী নির্যাতন-সহ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর অভিযোগ পাহাড় প্রমাণ৷ তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালি৷ টালবাহানা ও আইনি জট কাটিয়ে অবশেষে পুলিশের জালে সন্দেশখালির ‘বাঘ’৷ আজ সকাল ৯টায় মিনাখাঁ থানায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার।

গত ৫ জানুয়ারি রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তে সূত্রে শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছন ইডি আধিকারিকরা। দুটি মোবাইল নম্বরে ফোন করে বার বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় গোয়োন্দারা। একটি নম্বর দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত দেখায়। আরেকটি নম্বরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ গেলেও ইডির কথা শুনেই ফোন কেটে দেন শাহজাহান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর সরবেড়িয়ার বাড়ির সামনে জমা হয় কয়েকশো লোক৷ তাদের হাতে আক্রান্ত হতে হয় ইডি আধিকারিকদের। মাথা ফেটে ঝরে রক্ত। হামলা চালানো হয় ইডি-র গাড়িতেও৷ তার পর থেকেই ‘নিখোঁজ ’ হয়ে যান তৃণমূল নেতা৷ নিজের ‘সাম্রাজ্য’ ছেড়ে কোথায় গা ঢাকা দিলেন ‘সন্দেশখালির বাদশা’? এই নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি৷ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি ছিল, বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন শাহজাহান। পরে অবশ্য সেই দাবি উড়িয়ে তিনি বলেন, শাহজাহান রয়েছেন পুলিশের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’!  আবার সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএমের বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের দাবি ছিল, তিনি নাকি সন্দেশখালির এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন শাহজাহানকে। তবে শাহজাহানকে গ্রেফতারের দাবিতে জ্বলে ওঠে সন্দেশখালি৷ মহিলা সামনে এসে তাঁর বিরুদ্ধে গর্জন করে ওঠেন৷ লাঠি-ঝাঁটা হাতে পথে নামেন। অশান্তির আগুন নেভাতে সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন৷ 

এদিকে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। না হলে রাজ্য পুলিশই শাহজাহানকে গ্রেফতার করে নিতে পারে। তৃণমূল সেনাপতি আরও বলেন, “ শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কিন্তু রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালত।’’ এর পরেই প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। আমরা পুলিশকে বলিনি, যে শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে না।’’ শুধু তাই নয়, বুধবার প্রধান বিচারপতি এও বলেন, “শুধু পুলিশ কোন, সিবিআই, ইডি যে কেউ শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে পারে।” এর পরই পুলিশের কব্জায় আসে সন্দেশখালির ‘ত্রাস’৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *