নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যে আইনি জটিলতা ছিল তা কেটে গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। যে কোনও দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে। তবে দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও বহু আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মতো করে মিটিং মিছিল শুরু করে দিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রচার করবে তাদের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে সরব হবে তারা। উল্টোদিকে বিজেপি দুর্নীতির ইস্যুকে সামনে রেখে ভোটে ঝাঁপাবে।
এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি তৃণমূল সাংসদ দেবের একটি প্রশ্নের জবাবে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে শুধু পশ্চিমবঙ্গকে আবাস যোজনা বাবদ কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। অন্যান্য রাজ্যগুলিকে অবশ্য টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। উল্লেখ্য চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে দেব জানতে চেয়েছিলেন আবাস যোজনায় কোন কোন রাজ্য গত আর্থিক বর্ষে টাকা পেয়েছে সেটা জানানো হোক। এটাও জানতে চেয়েছিলেন কোন কোন রাজ্যকে টাকা দেওয়া হয়নি সেটাও জানিয়ে দিক কেন্দ্র। তার উত্তরেই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন একমাত্র পশ্চিমবঙ্গকে কেই টাকা দেওয়া হয়নি। আর বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই প্রকল্পে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কারণেই গত আর্থিক বর্ষে টাকা পাঠানো হয়নি।
প্রশ্ন হল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিষয়টিকে কি চোখে দেখবেন? তৃণমূল চুটিয়ে প্রচার করবে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গকে আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। পাল্টা বিজেপি তুলে ধরবে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই টাকা পাঠানো বন্ধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটাররা কার কথায় প্রভাবিত হবেন সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। এক্ষেত্রে তৃণমূল রাজ্যবাসীর আবেগ উস্কে দিতে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই এই ইস্যুটি তৃণমূলের কাছে একটা বড় হাতিয়ার হতে চলেছে।
একদিকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, অন্যদিকে দুর্নীতি, এই দুই অভিযোগকে নিয়ে বহুদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেলে গোটা বিষয়টি যে অন্য মাত্রা পাবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। কারণ পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার পরেই লোকসভা ভোটের দামামা কার্যত বেজে যাবে। পঞ্চায়েতে ফলের নিরিখে কোন লোকসভায় কারা এগিয়ে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেই মতো ঘুঁটি সাজাবে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। আর সেই নির্বাচনে রোজকার স্থানীয় ইস্যুগুলির পাশাপাশি তৃণমূল এবং বিজেপির হাতিয়ার হতে চলেছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা এবং দুর্নীতির অভিযোগ। এগুলি সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত কোন দল বাজিমাত করে এখন সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।