কলকাতা: দশ হাতে দশ প্রকার অস্ত্র, মাথায় মুকুট, সোনার জিভ, টিকলি, কানের দুল, নাকছাবি ইত্যাদি নিয়ে মা দুর্গার জন্য একাধিক গয়না থাকে। প্রতিটি পুজো কমিটির কিছু না কিছু গয়নাগাটি রাখা থাকে দেবীর জন্য৷ এবার সেখানে মাস্ক যোগ দেবে কিনা, এখনও সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পুজো উদ্যোক্তারা৷ মানুষকে সচেতনতার বার্তা দেওয়ার জন্য প্রতিমাকে মাস্ক পরানো যাবে কি না তাই নিয়ে আলোচনা চলছে কলকাতার একাধিক পুজো কমিটিগুলির মধ্যে।
অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার গোরীবাড়ির দুর্গা মায়ের জন্য ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে ৪১.৮ গ্রামের একটি রূপোর মুকুট। সোমবার, শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে গৌরীবাড়ির দুর্গার ওই মাস্ক পরা মুখ সামনে রেখেই খুঁটি পুজো সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ির সদস্য তথা পুজো উদ্যোক্তা মান্টা মিশ্রের কথায়, গৌরীবাড়ির পুজো এবারে ৮৭তম বর্ষে পড়েছে। মানুষকে সচেতন করতেই মাস্কের ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছে। বেলঘড়িয়ার এক স্বর্ণকার এই রূপোর মাস্ক তৈরি করেছেন। মান্টা বাবু জানিয়েছেন, ওই মাস্ক একটি মুকুট থেকে তৈরি করা হয়েছে। এবিষয়ে তিনি বলেছেন, “মুকুট আদতে একটি রক্ষাকবচ। তবে বর্তমানে মাস্ক একটি অত্যন্ত জরুরি রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করছে।”
গৌরীবাড়ির মতো শিয়ালদহ দত্ত বাড়ির দুর্গা প্রতিমার মুখেও থাকবে মাস্ক। এই বাড়ির এক সদস্যা কলেজ পড়ুয়া তরুণী দিশা দত্তের কথায়, “১৬০ বছরের পুজো আমাদের, প্রথমে ৭৫ বছরের ঠাকুমা এই মাস্কের কথা বলায় রাজী হচ্ছিল না, তারপর অনেক বোঝানোর পর তিনি রাজী হয়েছেন। বর্ধমানের এক স্বর্ণকারকে মাস্ক তৈরির বরাতও দেওয়া হয়ে গিয়েছে।” আমহার্স্ট স্ট্রিটের চন্দ্রবাড়ির ২৫৮ বছরের পূজোতেও দেবীকে দেখা যাবে মুখ ঢাকা অবস্থায়।
কিন্তু শোভাবাজার নন্দনবাড়ির সেবায়েত অতনু দত্তের মত আবার ভিন্ন। তাঁর মতে, প্রতিমা যদি মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারত তাহলে অবশ্যই মাস্ক পরানো যেত, কিন্তু তা তো হয় না, অতএব, ১২০ বছর ধরে চলে আসা পুজোতে কোনও প্রকার অনিয়ম করা যাবে না। পাশাপাশি একই মত প্রকাশ করেছেন দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ। যদিও তারা এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি বলেই জানা গেছে। হাতিবাগান সার্বজনীন ক্লাবের সম্পাদক শাশ্বত বসুর কথায়, এত দিন সমস্ত কিছুই পুজোর থিম ভাবনাইয় দেখা গিয়েছিল, সেখানে ‘নিউ নর্মাল’ না রাখার তো কোনও মানে হয় না। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এটা খুবই স্বাভাবিক বলেই মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি, ত্রিধারা সম্মিলনীর সদস্য দেবাশিষ কুমার জানিয়েছেন, দুর্গাকে মানুষভেদে বিভিন্ন ভাবে পুজো করা হয়। কেউ তাঁকে মা ভাবেন, কেউ বা মেয়ে। সেক্ষত্রে তাঁর মতে, মেয়ে হিসাবে পুজো করলে তাঁকে মাস্ক পরানো যায় বৈকি।
কিন্তু অন্যদিকে, একডালিয়া এভারগ্রীনের পুজো উদ্যোক্তা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, মা দূর্গা রক্ষাময়ী, তাই কোনও মহামারী বা দুর্ঘটনার ছাপ মায়ের মুখে ফেলা যায়না। তাই তাঁর মতে দুর্গার মুখে মাস্ক পরানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।