স্বাস্থ্য বিমায় লুকিয়ে একাধিক ফাঁদ, বাঁচতে কোন কোন বিষয়ে নজর রাখবেন?

স্বাস্থ্য বিমায় লুকিয়ে একাধিক ফাঁদ, বাঁচতে কোন কোন বিষয়ে নজর রাখবেন?

কলকাতা: রোগ বড় বালাই৷ কখন কী ভাবে অসুস-বিসুখ শরীরে বাসা বাঁধে, কে বলতে পারে৷ বিপদ-আপদ কখনও বলে কয়ে আসে না৷ তাছাড়া তাছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেও ভাঙতে শুরু করে শরীর৷ তখন ডাক্তার-বদ্যি লেগেই থাকে৷ সেই সময় আপৎকালী উদ্ধারকর্তা হিসাবে কাজে আসে হেলথ ইনস্যুরেন্স৷ ইতিমধ্যেই আপনার ও আপনার পরিবারেক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ ইনস্যুরেন্স করিয়ে নিয়েছেন নিশ্চয়৷ অনেকে আবার স্বাস্থ্য বিমা করার কথা ভাবছেন৷ তবে হেলথ ইনস্যুরেন্স করানোর আগে কিছু বিষয়ের উপর নজর দেওয়া উচিত৷ নাহলে ক্লেম করার সময় সমস্যায় পড়তে হতে পারে আপানাকে৷ মোটা অঙ্কের বিল খসতে পারে পকেট থেকে৷ এই ভিডিয়োতে আপনাদের সামনে এমন পাঁচটা পয়েন্ট তুলে ধরা হবে যা আপনাকে হেলথ ইনস্যুরেন্সে লুকিয়ে থাকে পাঁচটি ফাঁদ সম্পর্কে সতর্ক করে দেবে৷

সচরাচর হেলথ ইনস্যুরেন্স করানোর আগে অধিকাংশ মানুষই প্ল্যান নিয়ে ঠিক মতো স্টাডি করেন না৷ সংশ্লিষ্ট সংস্থায় যে প্ল্যানটি সবচেয়ে সস্তায় মেলে, সেটাই নিয়ে নেন৷ আর এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় ভুল৷ বোকা বনতে পারেন আপনি৷ 

সাব লিমিট- ধরুন আপনি হয়তো ২৫ লক্ষ টাকার বিমা করিয়েছেন৷ কিন্তু আপনার যদি ক্যাটাব়্যাক্ট হয়, তাহলে পাবেন ৩০ হাজার টাকা৷ এনজিওপ্লাস্ট করালে মিলবে ১ লক্ষ টাকা৷ এছাড়াও কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি কিংবা ডায়লিসিসের ক্ষেত্রে বিমা থেকে পাবেন মাত্র ৭৫ হাজার টাকা৷ তাহলে ২৫ লক্ষ টাকার সাব ইনস্যুর করিয়ে লাভ কী? সে সকল রোগের ঝুঁকি রয়েছে, সেখানেই কস্ট লিমিট বেঁধে দেওয়া হলে, শেষ পর্যন্ত মোটা অঙ্কের বিল দিতে হবে আপনাকেই!

মনে রাখবেন- আপনি চায় ৫ লক্ষ, ১০ লক্ষ কিংবা ১৫ লক্ষ টাকার সাব ইনস্যুর নিন, আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য যে প্ল্যান নেবেন তাতে যেন সাব লিমিট না থাকে৷ থাকলেও তা যেন সবচেয়ে কম হয়৷ হেলথ ইনস্যুরেন্সে এই সাব লিমিট হল সবচেয়ে বড় ট্র্যাপ৷ এজেন্টের কাছে গিয়ে স্বাস্থ্য বিমা করানোর আগে তাই সাবধান৷ ভুলেও সাব লিমিটের চক্করে পা দেবেন না যেন৷ 

দ্বিতীয় যে ফাঁদের কথা বলব, সেটিও ভয়ঙ্কর৷ কারণ হেলথ ইনস্যুরেন্স সম্পর্কে ধারণা থাকার পরেও অনেকে এই ভুলটি করে বসেন৷ আর সেট হল –
 

রুম রেট ক্যাপিং- এক্ষেত্রে বলা হয় আপনার যতটা পলিসি আছে তার ১ শতাংশ রুম রেট ক্যাপিং বা হাসপাতালের রুম ভাড়া পাবেন৷ আপনি যদি ১০ লক্ষ টাকার বিমা নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মনে হতে পারে ১০ হাজার টাকার রুম রেট ক্যাপিং পেয়ে যাব৷ যা যথেষ্ট৷ কিন্তু হিসাব ততটাও সোজা নয়৷ এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা রুম ভাড়া মেলে৷ সবাই সেটা পাবেন না৷ যেমন মনে করুন- আপনার যদি ১৫ লক্ষ টাকার পলিসি নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার রুম রেট হবে ৭ হাজার টাকা৷ ২০ লক্ষ টাকার পলিসি করালে মিলবে ৮,৫০০ টাকা৷ ২৫ লক্ষের উপরে পলিসি হলে রুম রেট ক্যাপিং হবে ১০ হাজার টাকা৷ 

এখানেও রয়েছে টুইস্ট৷ মনে করুন আপনার কাছে ২৫ লক্ষ টাকার পলিসি রয়েছে৷ আপনি হাসপাতালে ১০ হাজার টাকার রুম পাবেন৷ কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর দেখা গেল, যে ঘরে থেকে চিকিৎসা করাতে চাইছেন তার ভাড়া ১৫ হাজার টাকা৷ হিসাব কষে দেখলেন হাতে তো ১০ হাজার টাকা রয়েইছে৷ পাঁচ দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা করাতে হলে ২৫ হাজার টাকা বাড়তি দিলেই হবে৷ আপনি ঘর নিয়েও নিলেন৷ সব শেষএ আপনার টোটাল বিল এল ১২ লক্ষ টাকা৷ এখন প্রশ্ন হল এই পুরো টাকাটাই আপনি পেয়ে যাবেন তো? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর না৷ কারণ আপনি যদি এক তৃতীয়াংশ টাকা পকেট থেকে বার করে রুম রেন্ট দেন, তাহলে হাসপাতালের যত খরচ হবে সব ক্ষেত্রেই এক তৃতীয়াংশের রুল চেপে যাবে৷ অর্থাৎ নোট খরচের এক তৃতীয়ংশ টাকা বহন করতে হবে আপনাকেই৷ ১২ লক্ষ টাকার বিল হলে ঘর থেকে দিতে হবে ৪ লক্ষ টাকা৷ তাই হেলথ পলিসি নেওয়ার সময় রুম রেট ক্যাপিং-এর চক্করে না পড়াই ভাল৷ 

কো পে+ হেলথ ইনস্যুরেন্স প্ল্যান- এতে হয় কী, যখনই আপনার হেলথ ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত বিল আসবে, তার ২০, ৩০ কিংবা ৪০ শতাংশ আপনাকে পে করতে হবে৷ আমরা সবার আগে নিয়ে থাকি টার্ম ইনস্যুরেন্স, তারপর হেলফ ইনস্যুরেন্স৷ যাতে আমরা টেনশন ফ্রি হয়ে থাকতে পারি৷ টেনশন ফ্রি হতে গিয়ে প্রিমিয়াম বাঁচানোর চক্করে যদি কো পে পলিসি নিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার উপরে টাকার কোপ পড়বেই৷ 

বেসিক এক্সক্লুসন- এটি প্লাস্টিক সার্জারি, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস- কভা্র করে না৷ এছাড়াও আপনি যদি কোনও আইন ভাঙেন, তাহলে হেলথ ইনস্যুরেন্স-এর প্রয়োজন পড়লেও তা কভার করা হবে না৷ এছাড়াও ওয়েট লস কিংবা লিঙ্গ পরিবর্তন করানোর ক্ষেত্রে কোনও অর্থ দেওয়া হবে না৷ এছাড়াও বলে রাখি,অধিকাংশ পলিসিই মর্ডান ডে ট্রিটমেন্ট কভার করে না৷ তাই এমন পলিসি নেবেন যা মর্ডান ডে ট্রিটমেন্ট কভার করে৷ 

রিফিল ক্লস এবং বোনাস- ধরুন এই বছর আপানার কোনও ক্লেম এসেছে এবং তাতে ২৫ লক্ষ টাকার সাব ইনস্যুরেন্সই শেষ হয়ে গিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে কোম্পানি পলিসি রিফিল করে দেওয়া হয়৷ তবে খেয়াল রাখবেন রিফিল-এর শর্ত যেন সহজ হয়৷ অনেক পলিসি একই অসুখ এবং একই মানুষের জন্য রিফিল অ্যালাও করে না৷ এতে কিন্তু সমস্যা হতে পারে৷ আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে কতবার রিফিল করা যাবে৷ কারণ, কিছু কোম্পানি একাধিকবার রিফিল করার সুযোগ দেয়, কিছু কোম্পানি দেয় না৷ আবার কিছু কোম্পানি একাধিকবার রিফিল করার সুযোগ দিলেও একই রোগ বা একই মানুষের ক্ষেত্রে রিফিল করার অনুমতি দেয় না৷ ফলে শর্ত যত কম হবে ততই আপনার জন্য মঙ্গল৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *