উষ্ণ হচ্ছে বিশ্ব, গবেষণায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য

উষ্ণ হচ্ছে বিশ্ব, গবেষণায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য

কলকাতা:  বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হল বিষ্ণ উষ্ণায়ন। এটি শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এর প্রভাব পড়েছে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের উপরেও৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হলেই ভালো৷ সেক্ষেত্রে মানবজাতিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে৷ তবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ 

আরও পড়ুন- তুরস্কে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার পার, কঠিন হচ্ছে লড়াই, ঠান্ডার কামড়ে দিশেহারা মানুষ

গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে আরও ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় করা ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আগামী দশকের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা শিল্পবিপ্লব যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা পেরিয়ে যাবে। 

বিশ্ব উষ্ণায়ন সংক্রান্ত এই গবেষণাটি করেছেন আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তাঁদের গবেষণায় বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে মিলেছে বিপদের ইঙ্গিত৷ গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি পার করার পথে এবং এটা ঘটবে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে৷ ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা একে পৃথিবীর জন্য একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ যেখান থেক ফেরার আর কোনও পথ থাকবে না।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ও এই গবেষণাপত্রের সহ-লেখক নোয়া ডিফেনবাগ-এর কথায়, ‘এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের ওপর ইতোমধ্যে যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’

গবেষকরা বলছেন, যে নতুন পদ্ধতিতে (এআই) এই গবেষণা করা হয়েছে, তাতে বিজ্ঞানীদের হাতে থাকা প্রমাণ আরও শক্তিশালী হয়েছে। আগামী দিনে আমীদের নিশ্চত ভাবেই জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হবে৷ আমরা বিশ্ব উষ্ণায়নের যে প্রভাব অনুভব করছি তা আরও তীব্র হবে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০৪৪ থেকে ২০৬৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দুই ডিগ্রির মাত্রা অতিক্রম করার প্রায় ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন দ্রুত হ্রাস পেলেও। গবেষণার মডেলটি কতটা সঠিক সেটা বোঝার জন্য ঐতিহাসিক পরিমাপগুলোও গবেষণা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ২০২২ সাল পর্যন্ত রেকর্ড করা ১.১ ডিগ্রি উষ্ণতার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।

সাধারণত  সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে তাপ এসে পৌঁছায় তার প্রায় বেশির ভাগ অংশই পৃথিবী থেকে পার্থিব বিকিরণ রূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়৷ এর ফলে  পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় কিছু গ্যাস রয়েছে যা পার্থিব বিকিরনের কিছু পরিমাণ তাপ শোষণ করে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলে। এই গ্যাসগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়ে থাকে। গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান গ্যাস গুলি হল কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, মিথেন, ওজোন ও নাইট্রাস অক্সাইড। পৃথিবীকে কাঁচের ঘরের মতো বেষ্ঠন করে থাকা এই গ্রিন হাউস গ্যাস বিশেষত কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প না থাকলে পৃথিবীর বর্তমান গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি থেকে কমে – ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেত। 

মানুষের কিছু অবিবেচনামূবক কাজের জন্য এই গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে৷ যার ফলে এই গ্যাসগুলির দ্বারা শোষিত তাপের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রার পরিমান বেড়ে গিয়ে ঘটছে বিশ্ব উষ্ণায়ন।