তপন মল্লিক চৌধুরী : অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা আরজেডি, কংগ্রেস ও বামেদের মহাগঠবন্ধন-এর জয়ের কথা বলেছিল, তেজস্বী যাদবকে বিহারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দেখেছিল। সেসব হিসাব না মিললেও আড়াই দশক পরে বিহারের বিধানসভা ভোটে নতুন শক্তি নিয়ে ফিরে এল বাম দলগুলি।
এবার নির্বাচনে সিপিআই(এম-এল, সিপিএম ও সিপিআই ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েআরজেডি-কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে লড়েছিল। তার মধ্যে সিপিআই(এম-এল) ১৯টি,সিপিএম এবং সিপিআই লড়ছিল যথাক্রমে ৬ ও ৪টি আসনে।২৯টি আসনের মধ্যে ১৬ আসন ছিনিয়ে আনতে পেরেছেবাম প্রার্থীরা।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগেবিহার বিধাবসভা ভোটে বামেদের ভোট লড়াই টনিকের কাজ করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমবঙ্গে এবার অবশ্য বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ছে। বিহারের রাজনীতিতে বিগত দশটি বছর সরিয়ে রাখলে বামেদের সাংগঠনিকশক্তিকে মোটেও খাটো করে দেখা যাবে না। বরং বহু ক্ষেত্রেই তাদের রাজনৈতিক ভূমিকাকে স্বীকার করতেই হয়। যদিও বিহারের গত দুটি ভোটে বামদেরে ভোট ক্রমান্বয়ে কমেছে।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যাতে বাম দলগুলির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বিহার বিধানসভা ভোটে সিপিআই পেয়েছিল মাত্র একটি আসন। এরপর ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিআই(এম-এল)পেয়েছিল ৩টি আসন। অন্য দু’টি বাম দল সিপিএম ও সিপিআই কোনও আসন পায়নি।
ত্রিপুরায় বামেদের পতনের পর বামেরা একমাত্র কেরলেই আশা জাগিয়ে রেখেছে। কিন্তু বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বামেরদের লড়াই গোটা দেশের বাম কর্মী সমর্থকদের ফের চাঙ্গা করবে বলেই আশা। এর কারণ, ক্যাডারভিত্তিক বাম দলগুলি শুরু থেকেই বিজেপির বিরোধিতা করে জোর প্রচার চালিয়ে এসেছে। বিহারে লকডাউন চলাকালীন নীতীশ বিরোধী হাওয়া বেশ জোরেই বইতে শুরু করে, সেই সময় থেকেই তারা আর্থ-সামাজজিক ক্ষেত্রে বিকল্প নীতির প্রচারশুরু করে দেয়।
অনেকেই এত বছর পর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বাম দলগুলিকে নতুন উদ্যমে ফিরে আসতে দেখে অবাক হয়েছিল। তবে এক্সিটপোলও তাদের সমীক্ষায়বাম দলগুলি যে ভাল ফল করবে সে কথা জানিয়েছিল। ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস এক্সিটপোল জানিয়েছিল, ১৯ আসনের মধ্যে সিপিআই(এম-এল) ১২-১৩টি আসন পেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে বিহার বিধানসভা ভোটে লালুপ্রসাদের জনতা দলের সঙ্গে জোট বেঁধে অবিভক্ত বিহারের ৩২৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে সিপিআই ২৬ এবং সিপিএম ৬টি কেন্দ্রে জিতেছিল। সেবারসিপিআই(এমএল) অবশ্যআলাদা লড়েছিল এবং ৬টি আসন পেয়েছিল। বিহারে বাম দলগুলির মধ্যে সিপিআই (এম এল)দলের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ ভাল। বিহার নির্বাচনে বামেরা সবচেয়ে ভাল সেই বছর। কিন্তু তার পর থেকে বিহার নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে সিপিআই এবং সিপিএমের আসন কমেছে।২০১০ সালে সিপিআই বিহারে শেষ বার ১টি আসন লাভ করেছিল। আর২০০৫-এর দুটি(ফেব্রুয়ারি এবং অক্টোবরে) নির্বাচনে সিপিএম ১টি করে আসন পেয়েছিল। তারপর আর তাদের অস্তিত্ব প্রায় ছিল না বলা যায়।
কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে বাম দলগুলি গ্রামীণ কেন্দ্রগুলিতে আসন দিয়ে ভাল ফসল তুলতে সফল হয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে ভাল ফল করেছে সিপিআই(এম-এল)। তারা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই দিতে আগেই তেজস্বী যাদবের আরজেডির সঙ্গে নির্বাচনী জোট করতে রাজি ছিল। পরবর্তীতে মহাজোটের ছাতার তলায় আসে সিপিএম, সিপিআই। ধরে নেওয়া হয়েছিল এবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তন ঘটবে। অনেকেই বলেছিল তেজস্বীর নেতৃত্বে সরকার গড়বে মহাজোট। মঙ্গলবার সকালে ভোটের ফলাফল প্রবনতা সেই ইঙ্গিত দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব হিসেব ওলটপালট হয়ে যায়। বামেদের এই ফলাফল দেখে বিহারের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, কংগ্রেসকে ৭০ টি সিট না দিয়ে বামেদের আরও কিছু আসন দেওয়া উচিত ছিল, তাতে অন্যরকম ফল হত।
বিহার ভোট পর্ব মিটেছে, এবার পশ্চিমবঙ্গের পালা।অমিত শাহ বিহার ভোটের আগেই বাংলার বিজেপি নেতাদের ২০০ আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন। এদিকে শাসক দল তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ জমছে শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে।বিজেপির অন্দরেও নিত্য লেগে আছে আছে কোন্দল।এই পরিস্থিতিতে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে বামেদের। গত এক দশকে প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর এটাই মস্ত বড় সুযোগ। বিহার ভোটের ফলাফল তাঁদের সেই মনের জোর আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।