কলকাতা: করোনা কালে যে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ জনজীবন, তার মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষাব্যবস্থায় ভাইরাসের কোপ। ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মোকাবিলায় ঘোষিত হয়েছিল দেশজোড়া লকডাউন। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দরজায় ঝুলছে তালা। অনলাইন মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা দূর করতে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের হাতে ট্যাব তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে ট্যাবের বদলে টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছে রাজ্য৷ কিন্তু, গোটা পদ্ধতি কার্যকর করতে গিয়ে এবার তৈরি হয় সমস্যা৷
মুখ্যমন্ত্রীর সেই ট্যাব সংক্রান্ত ঘোষণা নিয়ে এবার গর্জে উঠলেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাংশ৷ অভিযোগ, ছুটির দিনে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নির্দেশিকা অনুযায়ী দ্বাদশ শ্রেণির সমস্ত পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চূড়ান্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে জেলা স্কুল পরিদর্শকের তরফ থেকে। কিন্তু নানান কাজের ভিড়ে এত কম সময়ের আদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন। সূত্রের খবর, এই আচমকা নির্দেশের বিহিত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন তাঁরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের ফোরামের তরফ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, অতিমারীর আবহে স্কুল বন্ধ, হাতে গোনা কয়েকজন কর্মীকে দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে তাঁদের। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ সময়েই শিক্ষা দপ্তরের পোর্টাল কাজ করছে না বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। এত সমস্যার মধ্যেও জরুরি কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে স্কুলগুলিকে। স্কুল যখন বন্ধ তখন কী এমন জরুরি কাছ চলছে স্কুলে? জানা গেছে, স্কুলে চলছে মিড ডে মিলের কাজ, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফর্ম ফিলাপের কাজ, পাঠ্যপুস্তক বিলি করার কাজ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু এর মাঝেই দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ১০ লক্ষ পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নির্দিষ্ট করে দিতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ করতে গেলে ত্রুটি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ তার উপর সমস্ত পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যে থাকবে, তাও না৷ পড়ুয়াদের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের৷ অভিযোগ রাত ৯টায় জানানো হয়েছে পরদিন বেলা ১২টার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। যার ফলে চোখে সরষে ফুল দেখেছেন স্কুল প্রধানরা৷
প্রধান শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে তাঁদের উপর। এমনকি দেওয়া হয়েছে হুমকিও। আর তারপরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন রীতিমতো বিরক্ত প্রধান শিক্ষকরা। উল্লেখ্য, করোনা আবহে অনলাইনেই চলছে স্কুল কলেজগুলির পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া। কিন্তু বলা বাহুল্য রাজ্যের প্রতিটি পড়ুয়ার ঘরে ঘরে অনলাইন পড়াশোনার উপযুক্ত পরিষেবা নেই। ফলে বিপত্তির মুখোমুখি হয়েছে অনেকেই। এই পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই গত মাসে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া যারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে, তাদের প্রত্যেককে একটি করে ট্যাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সেই ঘোষণা কার্যকর করতে গিয়ে তৈরি হল সমস্যা৷