বাংলার ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনও মুখ্যমন্ত্রী লড়বেন মেদিনীপুর থেকে! ৫০ বছরে এই প্রথম!

বাংলার ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনও মুখ্যমন্ত্রী লড়বেন মেদিনীপুর থেকে! ৫০ বছরে এই প্রথম!

8e7fc5ff42305a34e471d2c5b85e329e

নন্দীগ্রাম: সালটার ১৯৭১। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা অজয় মুখোপাধ্যায় টানা সপ্তমবারের জন্য তমলুক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেন। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায়। ফের দীর্ঘ ৫০ বছর পর একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেদিনীপুরের মাটি থেকে নির্বাচনে লড়তে চলেছেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত ১৮ জানুয়ারি দুইদিনের জেলা সফরে মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটি জনসভা করেছিলেন তিনি। সেখানেই সভার মঞ্চ থেকে নন্দীগ্রামে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। তারপরই মেদিনীপুরের মাটিতে গত ৫০ বছরে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার নিয়ে এবং একইসঙ্গে দুটি কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়া নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতির ময়দানে। মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী আস্থাভাজন প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ বিজেপি মেদিনীপুরে যাতে বেশি সুবিধা না করতে পারে তার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

এদিকে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার নিয়ে উচ্ছ্বসিত মেদিনীপুরবাসী। ২০০৭ সালে জমি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হওয়াটা খুব বড় পাওনা। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি জমি আন্দোলনে নিহত আন্দোলনকারীদের পরিবারও। ভাঙাবেড়া আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নিখোঁজ হন সুব্রত সামন্ত। তবে আন্দোলনের প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন তার স্ত্রী শ্রীমতি সামন্ত। তিনিও এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামের প্রার্থী হচ্ছেন। এতে আমরা সবাই ভীষণ খুশি। ওনাকে নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচনের জিতিয়ে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করতে চাই।” জমি আন্দোলনে অধিকাংশ শহীদদের পরিবারই রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে।

এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করার পরেই জোর কদমে কাজ শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী কয়েকদিন আগেই নন্দীগ্রামে যান। সেখানে গিয়ে দুটি ব্লকের নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। শুরু হয় মিটিং-মিছিল ও দেওয়াল লিখনের কাজ। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে জিতে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আগামী দিনে এটাই হবে আমাদের অহংকার।” নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে কোনোরকম ঘোষণা না করলেও নন্দীগ্রামে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় নিশ্চিত করার প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসকদল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *