বাম-কংগ্রেস কেন প্রথম ও নির্ভরযোগ্য বিকল্প নয় ? বলবেন কী সীতারাম?

বাম-কংগ্রেস কেন প্রথম ও নির্ভরযোগ্য বিকল্প নয় ? বলবেন কী সীতারাম?

0a233de994b62d833ffe11bf0e854119

দেবময় ঘোষ: পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। সিপিএম নিজের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত – এমনই মনে হয়। একদিকে বামপন্থীদের ভোট কমছে। অন্যদিকে, সেই ভোট চলে যাচ্ছে বিরোধী তৃণমূল-বিজেপির দিকে। এই পরিস্থিতিতে, বাম রাজনীতির মুখ কী হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনও সন্দেহ নেই যে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে এগোতে চাইবে নেতৃত্ব। কিন্তু তারা কী সদর্পে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ফিরে আসার অঙ্গীকার করতে পারবে? আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবে, নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের মাঝে থেকেই? বামপন্থীদের শরীরী ভাষায় তা মিলছে না।

সিপিএম মুখে বলছে, তৃণমূল-বিজেপির আঁতাত স্পষ্ট। কিন্তু, ২০২১ – বাম-কংগ্রেস বিকল্প সরকারের গঠন করবে – তা মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে না। সাম্প্রতিক বিহার নির্বাচনে বামপন্থীদের সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে অনেকে অক্সিজেন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, বিহারে কি কখনও বামপন্থীরা সরকার গঠন করেছে? উত্তর না। কিন্তু বিহারে এক সময় বামপন্থীরা উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসাবে উঠে এসেছিল। বামপন্থীরা পুরনো জমির কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছে। উল্লসিত হওয়ার অবশ্যই কারণ রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেছে বাম সরকার। কিন্তু, ২০১১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর গত নয় বছরে বাম রাজনীতি দেখে মনে হয়নি যে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। মমতার কড়া সমালোচনা করেও বামপন্থী কণ্ঠে সদর্পে শোনা যায়নি – ক্ষমতায় ফিরছি। পারলে আটকে দেখাক। বাম রাজনীতির flamboyance যেন কোথাও কমে গিয়েছে।

সম্প্রতি গণশক্তি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “প্রধান শত্রু বিজেপি। সারা ভারতেই এবং বাংলায় প্রধান শত্রু বিজেপি। রণকৌশলের মুখ্য প্রশ্ন হল এই শত্রুকে আমরা কীভাবে হারাতে পারি। আমি আগেই বলেছি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই না করলে, প্রচার না করলে শাসক-বিরোধী ভোটের একটাই রাস্তা খুলে যাবে। তা হলো ভোট চলে যাবে বিজেপি-র কাছে। যে লক্ষ্যের জন্য আমরা কাজ করব, সেই লক্ষ্যই পরাস্ত হবে। এমন কোনো কৌশল নিলে বিজেপি-ই লাভবান হবে।”

তিনি আরও বলেছেন, “বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই চায় দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার একটি ভাষ্য তৈরি হোক। হয় বিজেপি, না হয় তৃণমূল। উভয় শক্তিই এই মেরুকরণকে মদত দিচ্ছে। যাতে তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক শক্তির জন্য জায়গা না থাকে। এই দ্বিমেরুর আখ্যানে শেষ পর্যন্ত লাভ হবে বিজেপি-র। জনগণ কোনো বিকল্প না পেলে বিজেপি-র দিকে যাবেন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নীতি জনস্বার্থবিরোধী। বিজেপি-র নীতি থেকে তা পৃথক নয়। উভয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই তৃতীয় এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প তৈরি হবে।”

কিন্তু, প্রশ্ন থাকবে যে, তৃতীয় বিকল্প নিয়ে বামপন্থীরা কী ভাবছেন। তারা কি ব্যাতিক্রমী কিছু চিন্তা ভাবনা করছেন ? নাকি, ২০১৯ (লোকসভা), ২০১৬ (বিধানসভা) এর মত গতানুগতিক চিন্তাভাবনার বাইরে বেরোতে পারেননি। তৃতীয় বিকল্প কি ক্ষমতায় ফিরে আসার অঙ্গীকার করবে? বাম-কংগ্রেস মিলিত শক্তিকে আমি কেন তৃতীয় বিকল্প বলতে যাব? তা কেন প্রথম বিকল্প নয়। কংগ্রেস এবং পরে বামফ্রন্ট বেশ কয়েক দশক ধরে বাংলার ক্ষমতায় থেকেছে। এই দুই রাজনৈতিক মতধারার কী প্রথম বিকল্প হওয়ার অধিকার নেই। সেই কথা কেন বললেন না সীতারাম?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *