উচ্চ প্রাথমিকে বাতিল শিক্ষক নিয়োগ! প্রতিক্রিয়া শিক্ষামন্ত্রীর, ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি? নিন্দা শিক্ষা মহলে

উচ্চ প্রাথমিকে বাতিল শিক্ষক নিয়োগ! প্রতিক্রিয়া শিক্ষামন্ত্রীর, ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি? নিন্দা শিক্ষা মহলে

কলকাতা: দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে থমকে রয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ মেধাতালিকায় অনিয়ম-সহ গুচ্ছ অভিযোগ তুলে দায়ের হয়েছিল মামলা৷ নিয়োগের উপর জারি ছিল স্থগিতাদেশ৷ দীর্ঘ শুনানি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবশেষে রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট৷ তাতে বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার৷ গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে নিয়োগের রায় ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট৷ বিচারাধীন বিষয়, আদালতের নির্দেশ আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুল সার্ভিস কমিশনও৷ আদালতের রায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হতেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে শিক্ষক মহল৷

উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১১ ও ২০১৫ সালের উচ্চ প্রাথমিকে সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল৷ বাতিলের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চের৷ নিয়োগের গোটা প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপোষণ, দুর্নীতির সরাসরি অভিযোগে বাতিল গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল ও মেধাতালিরা সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ আগের প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷

নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হলেও নতুন করে শুরু হতে চলেছে নিয়োগ৷ আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ ১০ মের মধ্যে ইন্টারভিউ নিতে হবে৷ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ যারা নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ গিয়েছিল, তাদের সবাইকে সুযোগ দিতে হবে বলেও জানিয়েছে আদালত৷ চাইলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়োগ করতে পারেন স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, এই রায়ে এটা প্রমাণিত হল, যারা নতুন নিযুক্ত হবেন তারা দুর্নীতির মাধ্যমে নিযুক্ত হবেন না৷  আদালতের রায় ঘোষণার পর শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়৷ সমস্ত কিছু দেখে, যারা নিয়োগ করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখব৷’’ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়েছেন, ‘‘বাংলায় সমস্ত কিছু অনিয়মিত৷ এই অনিয়মিত বিষয় এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে৷ বাংলায় নিয়মিত কিছু হয় না৷’’

আদালতের নির্দেশে প্যানেল ও মেধাতালিকা বাতিল হতেই রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শিক্ষক মলের একাংশ৷  শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘উচ্চপ্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট৷ অস্বচ্ছতার নজির সৃষ্টি করে বহু চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যতকে নষ্ট করেছে সরকার৷ ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই৷ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সফল প্রার্থীরা নতুন করে সাফল্য পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷ দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার ফলে যেসব চাকরিপ্রার্থীর বয়স পেরিয়ে গিয়েছে, তাদেরও পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হোক৷ আগামীতে দ্রুত নিয়োগে জন্য যা যা করণীয় পদক্ষেপ তা গ্রহণ করতে হবে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের জন্য প্রকাশ্যে চাকরিপ্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের তালিকা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি৷’’

মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতি”র সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছি৷  আজ আদালতের রায়ে এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হল৷ রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত, বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এই প্রতারণা কোনভাবেই মানা যায় না৷ আমরা আদালতের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *