‘কোন জাদুকরের ছোঁয়ায় ওএমআর শিটে নম্বর বিকৃতি?’ প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

‘কোন জাদুকরের ছোঁয়ায় ওএমআর শিটে নম্বর বিকৃতি?’ প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা: কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে নবম ও দশম শ্রেণিতে চাকরিরত ‘ভুয়ো’ শিক্ষকদের আরও একটি তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। নবম-দশমের শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসাবে চাকরিরত ৪০ জনের নাম, রোল নম্বর-সহ ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) এবং মার্ক শিট প্রকাশ করা হয় কমিশনের তরফে। অভিযোগ, প্রথম প্রকাশিত তালিকায় ১৮৩ জনের পাশাপাশি এই ৪০ জনও এসএসসি পরীক্ষায় কয়েকটি মাত্র উত্তর দিয়েই গুচ্ছ নম্বর পেয়েছেন।  কিন্তু কী ভাবে এই ওএমআর শিট বিকৃতি করা হল? কীভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারে নম্বর বৃদ্ধি পেল?’ জানতে চাইলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন- এফআইআর ছাড়াও শুভেন্দুকে গ্রেফতার করা যায়, উদাহরণ আমি নিজে! মন্তব্য কুণালের

নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলায় এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘উত্তরপত্রে ৩ নম্বর আর স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারে নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৩! কোন জাদুকরের ছোঁয়ায় প্রাথমিক টেটে ৪০টি ওএমআর শিটে নম্বর বিকৃতি? পি সি সরকার সিনিয়র না জুনিয়র, কোন ছোঁয়ায় নম্বর বৃদ্ধি, এটাই আদালত জানতে চায়’’৷ প্রাথমিক টেটে নম্বর বিকৃতি নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন বিচারপতি৷ গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ডডিস্কে প্রাথমিক টেটের ওএমআর শিটের ৩ নম্বর এসএসসি সার্ভারে বদলে গিয়েছে ৫৩-য়! অনেকে সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছেন৷ এসএসসি নবম-দশমে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে৷ এসএসসি ওএমআর শিট মামলায় ৪০জনের মধ্যে ১২ জন হাইকোর্টে এলেন অবস্থান জানাতে  ওই ১২ জন শিক্ষককেই তাদের ওএমআর শিট বিকৃতি নিয়ে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

অভিযোগ, ওএমআর শিটে নম্বর বাড়িয়ে অযোগ্যদের চাকরির সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে! ওএমআর শিটে যিনি শূন্য পেয়েছেন, সার্ভারে দেখা গেল তাঁর নম্বর অনেক বেশি! অযোগ্যদের সুপারিশ গ্রহণ করেই তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন। কমিশনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বাংলা, ইংরেজি থেকে শুরু করে ইতিহাস, ভূগোল,  জীবনবিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞানে ‘ভুয়ো নিয়োগ’ হয়েছে। যারা ব়্যাঙ্ক জাম্প করে চাকরি পেয়েছেন, শুধু তাঁদের নামই নয়, অ্যাপ্লিকেশন আইডি, রোল নম্বর, কোন বিষয়ে পেয়েছেন, কোন ক্যাটেগরিতে পেয়েছেন সব তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। এই ৪০ জনের মধ্যে ২১ জনই বাংলা বিষয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এছাড়াও জীবনবিজ্ঞানে ৩ জন, ইতিহাসে ১০ জন, ভূগোলে ১ জন, ভৌতবিজ্ঞানে ১ জন এবং ইংরেজিতে ৪ জন বেআইনি নিয়োগ পান।     

ওএমআর শিট মূল্যায়নে বিস্তর কারচুরি করা হয়৷ প্রসঙ্গত, এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং শিক্ষক নিয়োগে ওএমআর শিট মূল্যায়নের বরাত দেওয়া হয়েছিল নায়সা কমিউনিকেশন প্রাইেট লিমিটেড নামে গাজিয়াবাদের একটি সংস্থাকে৷ কিন্তু তাঁরা এসএসসি-কে যে নম্বর জানিয়েছিল, তার সঙ্গে সার্ভার থেকে প্রাপ্ত নম্বরের কোনও মিল নেই৷ কিছু দিন আগেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সিবিআই একটি তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিটে ১০ জন পরীক্ষার্থী শূন্য পেয়েছেন৷  কিন্তু কমিশনের সার্ভারে তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৫৩। যাঁরা ১ বা ২ নম্বর পেয়েছেন, তাঁদের কারও নম্বর ৫১, কারও আবার ৫২।  ওয়েটিং লিস্টে থাকা এমন ২০ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৯ নম্বর বেড়ে ৪৯ হয়েছে।