‘কোনও মতে কেটে গেল ২৪টা বছর, তাই না? টেনিসকে বিদায় জানিয়ে চোখে জল ‘রাজা’র

‘কোনও মতে কেটে গেল ২৪টা বছর, তাই না? টেনিসকে বিদায় জানিয়ে চোখে জল ‘রাজা’র

লন্ডন: টেনিস কোর্ট থেকে ‘রাজা’র বিদায়৷ ২৪ বছর যে কোর্টে কার্যত রাজত্ব করেছেন, সেই কোর্টকে আলবিদা জানাতে গিয়ে চোখে জল রজার ফেডেরারের৷ তবে বারবার বললেন, “এটা আনন্দের কান্না। আমি আনন্দে কাঁদছি।” কিন্তু, নিজেকে কতটা বোঝাতে পারলেন টেনিসের ‘মহারাজ’? 

আরও পড়ুন- বিদায়বেলায় দুঃখ-সুখের মুহূর্ত, কান্নাভেজা হাসি নিয়ে টেনিস ছাড়লেন রজার

এদিন টেনিসবিশ্বের এক ‘রাজা’র বিদায় হল রাজকীয় ঢঙেই৷ বিদায়বেলায় তাঁকে ঘিরে রইলেন একদা তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। লেভার কাপের এই ম্যাচে ফেডেরারকে জেতাতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন নাদাল। আবার ম্যাচ শেষে শিশুর মতো কেঁদে ফেলা ফেডেরারের কাঁধে হাত রেখে তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন জোকোভিচ। পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন অ্যান্ডি মারে, মাতেয়ো বেরেত্তিনি, ক্যাসপার রুডরা। জীবনের শেষ ম্যাচের পর মাইক হাতে অগণিত ভক্তের মাঝে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রজার বলেন, “কোনও মতে কেটে গেল, তাই না? আমি খুশি। আমার কোনও দুঃখ নেই।” 

রজারের জন্ম ১৯৮১ সালের ৮ অগাস্ট৷ মাত্র আট বছর বয়সে টেনিসের ব়্যাকেট হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কোচ পিটার কার্টার কিশোর রজারকে দেখে বলেছিলেন, এই ছেলে এক দিন এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় হবে। কোচের সেই কথা মিলে গিয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। মোট ৩১০ সপ্তাহ এক নম্বর ব়্যাঙ্কিংয়ে থেকেছেন রজার। তার মধ্যে ২৩৭ সপ্তাহ ধরে টানা প্রথম স্থানে ছিলেন। সেই রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙতে পারেননি। বিশ্বটেনিসে সবচেয়ে সফল টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে রজার অন্যতম৷ তাঁর ২৪ বছরের পেশাদারি টেনিসের এক সুবর্ণ অধ্যায়ে ইতি পড়ল আজ৷ 

লেভার কাপে রাফায়েল নাদালের সঙ্গে জুটি বেঁধে জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস টিয়াফো জুটির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন রজার ফেডেরার৷ এক সময় যাঁরা গ্র্যান্ড স্ল্যাম-এর লড়াইয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন, তাঁরাই এদিন লড়লেন একে অপরকে জেতাতে। যদিও শেষরক্ষা হল না৷ শনিবারের ম্যাচে হারতে হয় ফেডেরার-নাদাল জুটিকে৷ ফেডেরারের কথায়, ‘‘আরও এক বার জুতোর ফিতেটা বাঁধলাম। যাই করলাম, সবটাই শেষ বারের মতো৷ সমর্থক, বন্ধু, পরিবার, সতীর্থদের পাশে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। দারুণ একটা ম্যাচ হল। আমি খুশি।” 

টেনিস জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের পর কথা বলার সময় নিজের আবেগকে চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ২০টি গ্ল্যান্ড স্লামের মালিক। কিন্তু পারলেন না। নাদালকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েই গলা ধরে এল তাঁর। কান্না ভেজা কণ্ঠে বললেন, “নাদালের সঙ্গে এক দলে খেলাটা ভীষণ ভাবে উপভোগ করলাম। এখানে উপস্থিত সকল কিংবদন্তিকে আমি ধন্যবাদ জানাই।” 

টেনিস মূলত একার লড়াই৷ অনেকেই বলেন, টেনিস নাকি একজন খেলোয়াড়কে খুব একা করে দেয়৷ ২৪ বছরের টেনিস জীবনে সেটা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছেন ফেডেরারও৷ তাই জীবনের শেষ ম্যাচে আর একা খেলতে চাননি। চেয়েছিলেন একটা দলের হয়ে খেলতে। তাইতো গ্র্যান্ড স্ল্যাম নয়, লেভার কাপে তিনি নামেন ইউরোপের হয়ে৷ সঙ্গী করেন নাদালকে৷ ফেডেরারের কথায়, “আমি একা হতে চাইনি। আজ একবারও নিজেকে একা মনে হয়নি। বিদায়ের মুহূর্তে একটা দলকে পাশে পেয়েছি। নিজেকে একটা দলের খেলোয়াড় বলে মনে হচ্ছে। সিঙ্গলস যেটা হয় না৷ যারা এত বছর ধরে আমার পাশে ছিল তাদের ধন্যবাদ।’’

২৪ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে ১ হাজার ৫২৬টি ম্যাচ খেলেছেন রজার। জড়িয়ে রয়েছে কতশত স্মৃতি, কত মুহূর্ত। যা গুনে শেষ করা যায় না। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা রজারের বর্ণময় কেরিয়ারে সেরা মুহূর্তগুলিকেই আজীবন আঁকড়ে ধরে রাখবেন টেনিস অনুরাগীরা৷