কলকাতা: গ্রামাঞ্চলে আজও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা পান না গর্ভবতী মহিলারা৷ সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয় কলকাতা বা বড় শহরের কোনও হাসপাতালে৷ প্রত্যন্ত এলাকায় কোনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সমস্যা দেখা দিলে রেফার করে দেওয়া হয় জেলা হাসপাতাল কিংবা মেডিক্যাল কলেজে৷ প্রসূতি রেফারের এই চলই এবার বদলাতে চলেছে রাজ্য৷ একান্ত জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া প্রসূতিদের সবরকম চিকিৎসা করা হবে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রেই৷ সেখানেই হবে জটিল সমস্যার সমাধান৷ নেপথ্যে রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ নামের টেলি মেডিসিন পরিষেবা৷
আপাতত রাজ্যের কিছু সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই পরিষেবা চালু করা হয়েছে৷ এই সব কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৯৮ জন প্রসূতির শারীরিক অবস্থা অডিয়ো-ভিজুয়াল মাধ্যমে পরীক্ষা করে ই-প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছেন শহরের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা৷ খুব শীঘ্রই গোটা রাজ্যে এই পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের৷ আপাতত রাজ্যজুড়ে হাজার দু’য়েক সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সেই লক্ষ্যে প্রতি জেলায় তিনজন করে প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে অ্যাপয়েন্ট করা হয়েছে৷
অদূর ভিবিষ্যতে রাজ্যজুড়ে এই পরিষেবা চালু করা সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী স্বাস্থ্যকর্তারা৷ গোটা রাজ্যে হাজার দশেক সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারে৷ তবে এই পরিমান স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে ২০২৬ সাল হয়ে যাবে৷ তখন শুধু গর্ভবতী মহিলারাই নন, ৬০-৯০ হাজার রোগী নিয়মিত ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’-এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন৷
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘এই ধরনের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র যত বেশি গড়ে উঠবে, ততবেশি উপকৃত হবেন গ্রামের মানুষ৷ তখন আর সময় ও পয়সা খরচ করে উন্নততর চিকিৎসার জন্যে শহরের বড় হাসপাতালে ছুটতে হবে না।’’ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সব সময় উপস্থিত থাকবেন। অন্যান্য রোগী কিংবা প্রসূতিদের জন্যে তাঁরাই অডিয়ো-ভিজুয়াল মাধ্যমে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টেলি-মেডিসিনের ব্যবস্থা করে দেবেন৷ তাঁরাই ই-প্রেসক্রিপশনের প্রিন্ট-আউট বার করে দেবেন৷ সেইমতো ওষুধ মিলবে ফার্মেসি থেকে। গোটা পরিষেবাটাই মিলবে বিনা পয়সায়৷
কীভাবে কাজ হয় এই স্বাস্থ্য ইঙ্গিত প্রকল্পে?
সবার আগে নিজের গ্রামের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সাব সেন্টারে যাবেন রোগী। সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স রোগীকে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বসিয়ে স্বাস্থ্য ইঙ্গিতের পোর্টাল চালু করে রোগীর সমস্যা আপলোড করে দেবেন৷ এরপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, পিজি, মালদা মেডিক্যালের যে চিকিৎসকই তখন অনলাইন থাকুন, তার সঙ্গে ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে পারবেন রোগী৷ সবটা শুনে প্রেসক্রিপশন লিখে দেবেন চিকিৎসক।