নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রত্যেকটা মানুষের সফলতার পিছনে একজন শিক্ষকের হাত থাকে। শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আচার আচরন, কথা বলা প্রতিটা ক্ষেত্রেই একজন শিক্ষক থাকেন। যেমন শিশুর প্রথম শিক্ষক তার মা। জীবনের প্রতিটা শিক্ষককে সম্মান জানাতে ৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে শিক্ষক দিবস পালন করা হয় দেশ জুড়ে। শিক্ষক সম্পর্কে এপিজে আবদুল কালাম বলেছিলেন, 'যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।’
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন উপলক্ষেই এই দিনকে পালন করা হয় শিক্ষক দিবস হিসাবে। এ বছর তাঁর ১৩৩ তম জন্মদিন। ভারতে ২০ শতকের শুরু থেকে এই দিনটি পালন করা হয়ে আসছে। বিশ্বের শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ অক্টোবর তারিখে। অ্যারিস্টটলের কথায়, ‘যাঁরা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অবিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মাননীয়। পিতামাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।’
১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভারতের রতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা রাধাকৃষ্ণণ, ছোটবেলা থেকেই সকল পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। সেখানে তাঁর বিষয় ছিল 'The Ethics of the Vedanta and its Metaphysical Presuppositions' বা ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা’।
১৯১৮ সাল নাগাদ তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ' দ্য ফিলোসফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর' এই সময়েই প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় গ্রন্থ 'দ্য রেইন অফ রিলিজিয়ন ইন কন্টেম্পোরারি ফিলোসফি' ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছিলেন কিছু বছর। ভারতের বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে একাধিক বার তাঁকে অধ্যাপনার জন্যে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। বিদেশেও ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ দর্শন অধ্যাপক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৩১ সালে বিদেশে তাঁকে 'ব্রিটিশ নাইটহুড' উপাধিতে সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৪ সালে পান 'ভারতরত্ন' সম্মান। তাঁর ছাত্ররা চেয়েছিলেন, তাঁর জন্মদিন পালন করতে। তিনি তখন বলেছিলেন, জন্মদিন পালনের থেকেও যদি 'শিক্ষক দিবস' পালন করা হয়, তাহলে তিনি বেশি খুশি হবেন। কথামতোই ২০ শতকের গোড়া থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।