কলকাতা: প্রাথমিক টেট মামলায় নতুন মোড়৷ প্রাথমিকের টেট মামলায় আদালতে ত্রুটি শিকার পর্ষদের৷ নম্বর দেওয়া ও প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছে৷ কলকাতা হাইকোর্টের কাছে তা স্বীকার করে নিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ৷ এদিন মামলার শুনানির সময় আদালত বলে, ছটি প্রশ্ন ভুল মামলায় ত্রুটি শোধরাবে বোর্ডই৷
আরও পড়ুন- জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ও জুনিয়র এগজিকিউটিভ পদে কর্মী নিয়োগ
২০১৪ সালে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ কিন্তু ওই পরীক্ষায় ছটি প্রশ্ন ভুল ছিল৷ যা নিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে৷ বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে ওই ছয়টি ভুল প্রশ্নের উত্তর দিলে ফুল মার্কস দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত৷ কিন্তু এই নিয়ম শুধুমাত্র মামলাকারীদের জন্য নাকি সকলের জন্য বলবৎ হবে, তা নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়৷ যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে৷ এরই মধ্যে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ১৬ হাজার ৫০০ শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ৷ কিন্তু ভুল প্রশ্নের উত্তর দিয়েও নম্বর মেলেনি বলে ফের মামলা হয় আদালতে৷ ভুল প্রশ্নের উত্তর দিয়েও নম্বর না পাওয়া এমন ২৬ হাজার চাকরি প্রার্থী শিক্ষক পদের জন্য অফলাইনে আবেদন করেন৷ গত সোমবার ৭৩৮টি শূন্যপদের জন্য প্যানেল লিস্ট প্রকাশ করে পর্ষদ৷ সেই প্রেক্ষাপটে চাকরি প্রার্থীদের একাংশ ফের আদালতের দ্বারস্থ হন৷
এদিন মামলার শুনানির সময় মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতে বলেন, অফলাইনে ফর্ম ফিলআপ করা বহু প্রার্থীই এখনও প্রাপ্ত নম্বর পাননি৷ তাই ইন্টারভিউ প্যানেলেও তাঁদের নাম নেই৷ জবাবে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি রয়ে গিয়েছে বলে স্বীকার করে নেন পর্ষদের আইনজীবী৷ তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে প্রাপ্য নম্বর দিয়ে প্যানেল তৈরি করা হবে৷ এর পরেই বিচারপতি অমৃত্য সিনহা বলেন, মামলাকারীর সংখ্যা তো দিন দিন বাড়বে৷ প্রয়োজনীর সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনারা কেন তা ওয়েবসাইটে আপলোড করছেন না? এর পরেই শুনানি আজকের মতো শেষ হয় ৷
৭৩৮টি শূন্যপদে নিয়েগের জন্য একটি স্ক্রুটিনি বা ইন্টারভিউ-এর তালিকা প্রকাশ করার পর হাইকোর্টে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাতে মামলাকারীদের অভিযোগ, তাঁরাও এই ছয় নম্বর পাওয়ার যোগ্য৷ কিন্তু তাঁদের ছয় নম্বর দেওয়া হয়নি৷ একই অভিযোগে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছে এবং আরও কতগুলি মামলা দায়ের হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে৷ এক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রস্তাব হল যে, পৃথক ভাবে মামলা দায়ের করার আর কোনও প্রয়োজন নেই৷ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ শীঘ্রই একটি পোর্টাল চালু করতে চলেছে৷ ওই পোর্টালেই অভিযোগ নথিভুক্ত করা যাবে৷ অভিযোগ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে পর্ষদ৷
এছাড়াও গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে৷ সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন এবং যাঁরা ছয় নম্বর পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের আগামী ২৬ তারিখ দুপুর ১২টার সময় ইন্টারভিউ অর্থাৎ স্ক্রুটিনির জন্য ডেকে পাঠানো হচ্ছে৷ পাশাপাশি নথিপত্র ভেরিফিকেশনের কাজও চলবে৷ এখানে একটি শর্তের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, যে উত্তরপত্রে তাঁরা উত্তর দিয়েছে অর্থাৎ ওএমআর শিটের প্রত্যয়িত কপি হাজির করতে হবে৷
এখানে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সকলের পক্ষে ওএমআর শিট জোগার করে পর্ষদের সামনে হাজির করা সম্ভব নয়৷ যাঁদের কাছে ওএমআর- শিটের কপি রয়েছে তাঁরা সেই কপি নিয়ে পর্ষদের কাছে পৌঁছবে৷ যাঁদের কাছে ওএমআর শিটের কপি নেই তাঁদের ওএমআর শিটের কপি পর্ষদকেই জোগাড় করে দিতে হবে৷ অথবা নথি দেখে ওই প্রার্থীরা ওএমআর শিটে কত নম্বর পেয়েছেন, তা জানাবে পর্ষদ৷
অন্যদিকে, গত এক বছর ধরে হাতে নিয়োগ পত্র নিয়ে ঘুরলেও গ্রুপ সি পদে নিয়োগ পাননি অরিন্দম মিত্র৷ স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি৷ ফিরিয়ে দিয়েছে স্কুলও৷ ১২ মাস নিয়োগ পত্র হাতে নিয়ে ঘোরার পর পেয়েছেন হাইকোর্টের বেতন বন্ধের নির্দেশ৷ তাঁর বক্তব্য, নিয়োগই পেলাম না, তার আগেই বেতন বন্ধ কী ভাবে? বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিঙ্গেল বেঞ্চে আবেদন করেছেন অরিন্দম৷ তাঁর যুক্তি, আগে তো গ্রুপ সি পদে যোগদান হোক৷ তারপর বেতন বন্ধ। ভুয়ো চাকরি কে পেয়েছে তাই নিয়ে সন্দিহান অরিন্দম নিজেও।
২০১৯ সালে গ্রুপ সি পদে নিয়োগ পত্র হাতে পান অরিন্দম মিত্র। তাঁকে যোগ দিতে বলা হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শ্রীরামপুর এগ্রিকালচার হাই স্কুলে। কিন্তু করোনা আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় তাঁকে স্কুল খোলার পর যোগাযোগ করতে বলেন কতৃর্পক্ষ৷ এরপর একাধিকবার স্কুল কর্তৃপক্ষ, জেলা স্কুল পরিদর্শক, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং পর্ষদের কাছে লিখিত আবেদন জানানোর পরেও কোনও ফল হয়নি৷ স্কুল খোলার পর অরিন্দম বাবু স্কুলে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় গ্রুপ সি পদে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মনোনীত অপর এক প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গ্রুপ সি-র নিয়োগ তালিকা মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের মে মাসে। নিয়ম অনুযায়ী এরপরে কোনও নিয়োগ সুপারিশ করতে পারেনা এসএসসি। অথচ মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগ হয়েছে বলেও অভিযোগ৷ অরিন্দম মিত্রের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী জানান, আগামী ৬ জানুয়ারি কমিশনের অবস্থান জেনে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করব৷