কাবুল: ২০০১ সাল৷ আফগানিস্তান থকে তালিবানদের সমূলে উচ্ছেদ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে মার্কিন বাহিনী৷ এর পর দুই দশক বেশ শান্তিতেই ছিল আফগানমূলক৷ কিন্তু ২০২১ সালে কাবুলিওয়ালার দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকার বাইডেন সরকার৷ মার্কিন সেনা আফগান ছাড়তেই ফের কাবুলের মসনদ দখন করে বন্দুকধারী তালিবান৷ শহরের বাতাসে ফের বারুদের ঘ্রাণ৷ চারিদিকে বুটের শব্দ আর রক্তচক্ষু৷ তালিবানের ভয়ে সে দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করলেন নাগরিকরা। বিমানবন্দরে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়৷ প্রাণ হাতে নিয়ে দেশ ছাড়ে তাঁরা৷
আরও পড়ুন- চাক্ষুষ করেছেন দুটি বিশ্বযুদ্ধ, দুটি অতিমারি! প্রয়াত বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ
২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট। নতুন করে ক্ষমতা আসে তালিবান৷ রাজ্যপাট হাতে নিয়েই তালিবানরা বোঝাতে চেয়েছিল তাঁরা বদলে গিয়েছে৷ কিন্তু, মুখোশটাই সার৷ তার পিছনে লুকিয়ে থাকা রক্তচক্ষু যে একই রকম রয়ে গিয়েছে, তাঁর প্রমাণ বারে বারে মিলছে৷ গত দেড় বছর ধরে আফগানিস্তানে চলা তালিবানি শাসনে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তমসাচ্ছন্ন আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দেখে শঙ্কিত হয়েছে গোটা দুনিয়া। এই প্রেক্ষাপটে তাদের প্রতি দুনিয়ার নজর বদলাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালিবান নেতৃত্ব। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ঝাঁ চকচকে সুপারকার তৈরি করল তালিবান সরকার।
আদ্যন্ত ঝাঁ চকচকে মডেলের এই অত্যাধুনিক সুপারকারের চেহারা এক কথায় চোখধাঁধানো। এটাই আফগানিস্তানে প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সুপারকার। যার নামকরণ করা হয়েছে, ‘মাডা ৯’। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই গাড়িটির মূল মডেল তৈরির কাজ শেষ হবে বলে জানা গিয়েছে৷ তার পরই সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা হবে এই অত্যাধুনিক ঝকঝকে গাড়ি৷ মরুপ্রদেশ কাতারে একটি প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে বিশ্বদরবারে আত্মপ্রকাশ করবে আফগানি সুপারকার৷ তেমনটাই জানিয়েছে তালিবান সরকার।
জানা গিয়েছে, গত ৫ বছর ধরে এই গাড়ি তৈরির কাজ চলছে। ‘এনটোপ’ নামে এক সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে গাড়িটি তৈরি করছে কাবুলের ‘আফগানিস্তান টেকনিক্যাল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট’ (এটিভিআই)। এই গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেই দুনিয়ার সামনে নিজেদের অগ্রগতির ছাপ রাখতে চাইছে কট্টরপন্থী তালিবান।
এই গাড়িটি কেমন দেখতে হবে? এর বৈশিষ্ট্যগুলিই বা কী কী? ‘মাডা ৯’ হল একটি ‘মিড-ইঞ্জিন সুপারকার’। এতে রয়েছে টয়োটা করোলার ইঞ্জিন। মূলত তীব্র গতির জন্য এই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটিভিআইয়ের প্রধান গুলাম হায়দর শাহামতের কথায়, ইঞ্জিনটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে গাড়িটি ঝড়ের গতিতে ছুটতে পারে।
সুপারকারটির চেসিস (গাড়ির নিম্নাংশের কাঠামো) খানিকটা টিউব আকৃতির। এটি খুব একটা ভারী নয়। শুধু চেসিসই নয়, গাড়িটি তৈরি করতে যে সকল যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি সবকটিই ওজনে হালকা। ফর্মুলা-১ রেসের গাড়িগুলোতে যেমন টিউবুলার চেসিস থাকে, সেই ধাচেই এই সুপারকারের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, পাহাড়ি এলাকাতেও দ্রুত গতিতে ছুটবে এই সুপারকার। আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকায় ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে মহড়া হয়েছে ‘মাডা ৯’ সুপারকারের। গাড়িটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালিয়ে দেখেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। তবে গাড়ির কোনও ছবি বা ভিডিয়ো এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
বলে রাখা ভালো, এই কাবুলি সুপারকারের দামও হবে আকাশছোঁয়া। ভারতে ‘ল্যাম্বরগিনি হুরাকেন’, ‘অডি আর৮’-এর মতো সুপারকারগুলির দাম কোটি টাকার উপরে। ‘মাডা ৯’ সুপারকারের দামও কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এই সুপারকারের দাম হতে পারে ২-৪ কোটি টাকা। এনটোপ সংস্থার সিইও মহম্মদ রিজা আহমদি জানিয়েছেন, এই গাড়ির হাত ধরেই বিশ্ব দরবারে নিজেদের ছাপ ফেলবে আফগানিস্তান। তবে কবে আফগানি সুপারকারের উদ্বোধন করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে এই গাড়ি কেবল আফগানিস্তানেই মিলবে৷ আগামী দিনে বিশ্বের অন্য দেশেও পৌঁছে যাবে এই সুপারকার।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>