কলকাতা: ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’, অর্থাৎ এক অঞ্চল এক পথ৷ চিনের গৃহীত একটি উন্নতি কৌশল ও কাঠামো৷ এই প্রকল্প অনেক দিন আগেই গ্রহণ করেছে পড়শি পাকিস্তান৷ এবার পাক ভূমি পেরিয়ে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ ঢুকে পড়তে চলেছে আফগানিস্তানে। সম্প্রতি, সে দেশের তালিবান সরকার এই মর্মে আনা প্রস্তাবে পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে।
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে চিনের হাত ধরে পাকিস্তান৷ বেজিং-এর দাবি ছিল, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাক অর্থনীতি অন্য উচ্চতায় পৌঁছবে৷ গত কয়েক বছরে পাক মুলুকে বেশ খানিকটা এগিয়েছে কাজ৷ কিন্তু ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্প নিয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। দাবি, চিনের পাতা এই উন্নয়ের ফাঁদে পা দিয়ে ডুবতে হয়েছে তাদের। এখন একই টোপ ফেলে আফগানিস্তানের শুষ্ক ভূমিতে ঢুকে পড়তে চাইছে ড্রাগনের দেশ।
তালিবানশাসিত আফগানিস্তানে অর্থনীতির ভিত বেশ নড়বড়ে। তালিবানের ক্ষমতা আসার পর আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সে দেশের উপর৷ এই পরিস্থিতিতেই ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের আওতায় আফগানিস্তানে ঢুকে কয়েক কোটি টাকার নির্মাণকাজ শুরু করার উদ্যোগ নিচ্ছে চিন। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেলে পাকিস্তানের পর ভারতের উত্তর-পশ্চিমের এই দেশেও নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কৌশল নেবে বেজিং৷
এই মর্মে গত শনিবার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেন চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং৷ সেখানে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের স্বার্থে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি)-এর জন্য বরাদ্দ প্রায় ৪ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। সেই প্রকল্প আফগানিস্তান গ্রহণ করলে সে দেশের উন্নতিসাধন হবে বলেই দাবি বেজিং এবং ইসলামাবাদের।
প্রায় এক দশক আগে পাকিস্তানে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্প চালু করেছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷ এবার এই লোভনীয় প্রস্তাব যায় আফগানিস্তানের কাছে৷ তৎক্ষণাৎ তা লুফে নেয় তালিবান সরকার৷ চিনা প্রকল্পের হাত ধরেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তাঁরা।
এদিকে, আফগানিস্তানের কিছু অর্থনৈতিক সম্পদ বিদেশে গচ্ছিত রয়েছে। যা তালিবান সরকারে হাতে তুলে দেওয়া হয়নি৷ পাছে তারা এই সম্পদ সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকলাপে ব্যবহার করে৷ চিন এবং পাকিস্তান সমঝোতা করে আফগানিস্তানের সেই বিদেশি সম্পদ মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে৷ তবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে আদৌ আফগানিস্তানের উন্নতি হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এই প্রকল্প নিয়ে পাকিস্তানের অন্দরে খুব একটা ইতিবাচক কথা শোনা যায়নি। বরং, পাকিস্তানে ক্রমাগত অর্থনৈতিক অবনিত ঘটেছে৷
পাকিস্তানের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাবে উল্টো সুর৷ দাবি, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পকে হাতিয়ার করে একতরফা মুনাফা লুটছে চিন। ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে পাকিস্তানের ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে। সিপিইসি নিয়ে পাক ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ক্ষোভ দিন দিন তীব্র হচ্ছে৷ ২০১৫ সালে যখন সড়ক প্রকল্প চালু করা হয়, সেই সময় চিনের প্রতিশ্রুতি ছিল, পাকিস্তানের বার্ষিক আর্থিক বৃদ্ধি অন্তত আড়াই শতাংশ হবে। দেশজুড়ে বাড়বে কর্মসংস্থান। বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং জ্বালানির জোগান স্থিতিশীল হবে৷ কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। বরং এই ছ’বছরে দুর্বল হতে হতে টলমল অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে পাক অর্থনীতি৷
তবে পাকিস্তানকে সেই সময় হুঁশিয়ার করেছিল পশ্চিমি দুনিয়া৷ আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি বলেছিল, সিপিইসি-এর লাভের গুড় চিনই পাবে৷ কিন্তু পাকিস্তান সে কথায় কর্ণপাত করেনি৷ এবার একই পথে পা বাড়াচ্ছে আফগানিস্তান৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>