বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: বাজার গরম হতে শুরু করেছে সেই অক্টোবর থেকেই। ‘দাদার অনুগামী’দের ব্যানারে একের পর এক অরাজনৈতিক সভা, ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, প্যারাশুটের তকমা টানা থেকে শুরু করে নাম না করে দলের নেতাদের তরজা সেই উত্তাপ বাড়ছিল৷ দিন যতই এগিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে পারদ চড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে রাজ্য মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করার পর তাঁর পদ্মযোগের জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। সূত্রের খবর, শনিবার নয়াদিল্লিতে দলের সদর দফতরেই গেরুয়া পতাকা হাতে নিতে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে।
‘দাদার অনুগামী’ ব্যানার থেকে শুরু। পুরুলিয়া সহ বিভিন্ন জেলায় তৈরি হয়েছে দাদার অনুগামীদের দলীয় কার্যালয়। ‘তারিখ পে তারিখ’ চলতে থাকায় জল্পনাও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। ১৭ ডিসেম্বর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবসেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলেও জল্পনা রটে যায়। যদিও তেমনটা হয়নি। তারমধ্যেই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কনিস্ক পাণ্ডা জানিয়ে দেন, ‘‘দাদা যা বলার দক্ষিণ কলকাতায় বলবেন৷’’ সেই ভবিষ্যতবাণীও মেলেনি৷ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। যদিও গত পরশুও পদত্যাগের চেষ্টা করেছিলেন, যদিও তা সম্ভব হয়নি। দলের মধ্যে বেসুরো সুর শোনা যাচ্ছে অনেক নেতার গলাতেই।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরে বঞ্চনার অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। দলের ওপর ক্ষুব্ধ বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রেরও এছাড়াও দলের অনেক নেতার গলাতেই শোনা যাচ্ছে বেসুর সঙ্গীত। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারী, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, শীলভদ্র দত্ত, ছাড়াও যোগ দিতে পারেন আরও অনেকে। গতকাল রাতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার এক সদস্যও। তিনিও গেরুয়া শিবিরে যোগদান করতে পারেন বলে সূত্রের খবর। আগামী কয়েকমাস ধরে এই দলবদলের পালা চলবে বলে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে৷ সূত্রের খবর, আগামিকাল রাতে অথবা বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছাবেন শুভেন্দু অধিকারী। পরদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ একাধিক বিজেপি শীর্ষ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছেন অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে। তারপরদিনই পদ্মের পতাকা হাতে নেবেন তিনি।
বিজেপি নেতাদের একাধিকবার বহিরাগত বলে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়েও নাম না করে জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সতীশ সামন্তের জন্ম শতবার্ষিকি অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা আগে ভারতীয়, তারপর বাঙালি।’’ এরপরেই সতীশ সামন্তের প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু বলেন, “সতীশচন্দ্র সামন্ত কখনই জওহরলাল নেহেরুকে বহিরাগত ভাবতেন না। নেহেরুজিও কখনও সতীশ সামন্তের অহিন্দিভাষী ভাবতেন না। তাঁদের পারষ্পরিক সম্মানজ্ঞাপন অটুট ছিল। এটাই ভারতবর্ষ।” গতমাসেই রাজ্য সরকারের দেওয়া জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তাবাহিনী ছেডে় দেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপরেই তাঁকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেখানে থাকবেন ২০ জনেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী। বিজেপি সূত্রের খবর, উল্লেখিত নেতারা ছাড়াও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তৃণমূলের তাবড় নেতারা। বিধানসভা ভোটের আগে সরকারের পতন হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। যদিও উল্টোদিক থেকে ততটাই আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল শিবির।