কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে৷ উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়৷ তবে শিক্ষাঙ্গনের সীমা ছাড়িয়ে যাদবপুরকাণ্ডে লেগেছে রাজনীতির রং৷ একে অপরের দিকে আঙুল তুলছেন রাজনীতির কারবারিরা৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর৷ এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে সভা করে বিজেপি যুবমোর্চা৷ ওই সভার উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ অভিযোগ, সভা থেকে ফেরার পথে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছে। এবং সবটাই হয়েছে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ ভাবে৷ তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি। তাঁকে কালো পতাকাও দেখানো হয়৷ এই অভিযোগেই শুক্রবার যাদবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, এই হামলার ঘটনার পিছনে রয়েছে ‘রেভলিউশনারি স্টুডেন্ট ফেডারেশন’ (আরএসএফ) নামে নিষিদ্ধ নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন৷
বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগের পড়ুয়ার ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ সভা ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠন রেভোলিউশনারি স্টুডেন্টস ফেডারেশনের মধ্যে হাতাহাতিতে তুলকালাম কাণ্ড বাধে। বেশ কয়েকজন ছাত্র আক্রান্তও হন। বৃহস্পতিবার যাদবপুর এইট–বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিজেপি যুব মোর্চার প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন তখন তাঁকে কালো পতাকা দেখায় বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। তাঁকে উদ্দেশ্য করে স্লোগানও দেওয়া হয়৷ এর পরেই শুরু হয় মারামারি৷ শুভেন্দুকে অতর্কিতে আক্রমণ করা হয় বলেও অভিযোগ৷ সেই অভিযোগ নিয়েই আজ, শুক্রবার এফআইআর দায়ের করেন বিরোধী দলেনতা৷
এদিকে, শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখানোর সময় তাঁর সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানেরা পড়ুয়াদের উপর চড়াও হন। ছাত্রদের লাথি মারতেও দেখা যায় এক জওয়ানকে। শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখানোর অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে তুলেও নিয়ে যায়। পরে অবশ্য তাঁরা ছাড়া পেয়ে যায়৷
যদিও শুভেন্দুর অভিযোগ, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে সভামঞ্চ ছাড়ার সময় তাঁর উপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়৷ তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়া হয়। তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে বিজেপি বিধায়কের দাবি, দুষ্কৃতীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার সম্ভাবনা ছিল৷ তাই বাধ্য হয়েই নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয়বাহিনী জওয়ানেরা হস্তক্ষেপ করেছেন। তাঁকে নিরাপদে সেখান থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ অন্য দিকে, আরএসএফ-এর হামলা চালিয়েছে বিজেপি।
শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি পোস্ট করে অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় তিনি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বলেও সেখানে উল্লেখ করেছেন। গতকাল কোনও ভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। একইসঙ্গে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩০৭, ৩৪১, ৩৪২, ৫০৬, ১২০বি, ৩৪ এবং ইউপিএ প্রয়োগ করার জন্য যাদবপুর থানার ওসিকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা৷
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিজেপির যুব মোর্চার সভা থেকে বাংলা পক্ষের নাম নিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাতেই চটেছে ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা। ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সৌরভ চৌধুরী ওই সংগঠনের সদস্য বলেও দাবি করেন বিজেপি বিধায়ক। শুভেন্দুর এই বক্তব্যের পরেই এফআইআর দায়ের করেন বাংলা পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী অবাস্তব কথা বলছেন। সৌরভ চৌধুরী বা যাদবপুরকাণ্ডে অন্যান্য ধৃতদের কারও সঙ্গেই কোনও যোগ নেই বাংলা পক্ষের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পক্ষের কোনও ইউনিটও নেই।’ গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, প্রকৃত দোষীদের থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই বংলা পক্ষেকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে৷