শুভেন্দুহীন তৃণমূল, কতটা প্রভাব পড়বে নির্বাচনে? সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা!

শুভেন্দুহীন তৃণমূল, কতটা প্রভাব পড়বে নির্বাচনে? সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা!

0c5f159fb434aacc86336f1bfcff1da1

কলকাতা :  তাঁর দলে থাকা কিংবা বিজেপিতে যোগদান ঘিরে জল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। এবার সেই জল্পনা আরও উসকে মন্ত্রিত্বের পর এবার তৃণমূল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নন্দীগ্রামের ‘মুক্তিসূর্য’ শুভেন্দু৷ এখন কবে দিল্লি যাচ্ছেন, কবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কিনা সেই চর্চা চলছে৷ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগে শুভেন্দু অধিকারী  রাজ্যের পরিবহণ, সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন৷ ছেড়ে দিয়েছেন রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা৷ তাঁর আগে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷ মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর শুভেন্দু হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন৷ এবার তৃণমূল বিধায়ক পদ থেকেও দিলেন ইস্তফা৷ কিন্তু শুভেন্দুর এই পদক্ষেপ কতটা সমস্যায় ফেলবে তৃণমূলকে? তুঙ্গে চর্চা৷

দলীয় পর্যবেক্ষক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে শুভেন্দুর সঙ্গেদলের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। দলে নিষ্ক্রিয় থাকলেও তিনি জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত কয়েকমাস ধরে তিনি বহুজায়গায় গিয়েছেন এবং সভা করেছেন। সেই সব সভা দিদির নয়, ছিল দাদার সভা৷ সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা, পোস্টার, ব্যানার এমনকি তৃণমূল নেত্রীর কোনও ছবি ছিল না। সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দু কখনও দলের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন৷ যাঁরা বড় পদে আছেন, তাঁদেরও পতন হবে বলেও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করেছিলেন শুভেন্দু৷ দলের অন্দরের কাঠামো নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন৷ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দুর বক্তব্য রাজ্যের রাজনীতিতে চরম শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, নন্দীগ্রামের দাপুটে নেতা এবার কোনও বড়সড় পদক্ষেপ নিতে চলেছেন৷ 

শুভেন্দুর ক্ষোভ-অভিমানে প্রলেপ দিতে স্বয়ং মমতার নির্দেশে দলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একান্তে বৈঠক করেছেন৷ তাতে বরফ গলেনি৷ পরে রামনগরের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর দল ছাড়া নিয়ে যখন জল্পনা চরমে পোঁছয়, তখন শুভেন্দু সাফ জানান, নেত্রী আমাকে ছাড়েননি, আর আমিও দল ছাড়িনি। তারপরও তৃণমূলের অন্দেরর রাজনীতিতে বহু জল গড়ায়৷ শুভেন্দুকে নিয়ে আচমকা সরব হয়ে ওঠেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একদিকে কল্যাণের অপ্রিতিকর কথাবার্তা তারপরই বাঁকুড়ার সভায় মমতার ‘ছাগলের তৃতীয় সন্তান’ নিয়ে মন্তব্যই মনে হচ্ছে শুভেন্দুর সঙ্গে দলের সম্পর্ক কার্যত চিড় ধরাতে সাহায্য করে বলে মত পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের৷ 

নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকেই শুভেন্দুর রাজনৈতিক উত্থান। তিনি বরাবরই দলের এবং নেতৃর অনুগত সৈনিক। যখনই নেত্রী তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা তিনি পালন করেছেন। দলের অনুশাসনের বাইরে যেতে তাঁকে দেখা যায়নি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেইশুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়ছিল। নন্দীগ্রাম দিবস থেকে সেই দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একসময় শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসে সবাই কর্মী। একজনই নেত্রী। তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির ফলেই শুভেন্দু গরহাজির থাকছিলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। শুধু তাই নয়, শুভেন্দু অধিকারী নিজের মতো করে জনসংযোগ করছিলেন। সেখানে দলের কোনও সংস্পর্শ থাকছিল না। শুভেন্দু অনুগামীরাও একেবারে ভিন্ন কর্মসূচিতে শুভেন্দুকে প্রচারের আলোয় আনছিলেন।

গত কয়েক মাস তাঁর চলা ফেরা কিংবা আচরণ কখনই দলের প্রতি গভীর আনুগত্য প্রকাশ করেনি। তখন থেকেই তিনি ভাব ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে থাকবেন কিনা। মেদিনীপুরে তখন তিনি এমন সভাও করেছেন, যেখানে নেত্রীর ছবি এমনকি দলের প্রতীক চিহ্ন ছিল না। তাঁর নিজের ছবিতেই ভরে থাকত সভাস্থল এমনকি আশপাশ। আজ তিনি সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে দিলেন ইস্তফা৷

শুভেন্দু যে চলে যাচ্ছেন, তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন মমতা৷ বাঁকুড়ার সভামঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছিলেন, তিনিই সারা বাংলার ‘পর্যবেক্ষক’। একইসঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন, কে বা কারা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, সেই খবরও তাঁর কাছে রয়েছে৷ জলপাইগুড়ি সভা থেকে মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ১০ বছর দলের খেয়ে এখন যারা এখানে-ওখানে যাচ্ছেন, তাঁদের তিনি বরদাস্ত করবেন না৷ দলে কে বড় তা কর্মীদের দেখতে নিষেধও করেন নেত্রী৷ প্রসঙ্গত; নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর এই দুই আন্দোলেনের জেরেই এ রাজ্যে পালাবদল হয়েছিল৷ তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর শুভেন্দু অধিকারীই এতদিন ছিলেন জনমানুষে সবচেয়ে বড় নেতা৷ বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এবার বিজেপির সঙ্গে কঠিন লড়াই। এই সময়ে শুভেন্দুর বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা তৃণমূলের ফল ভাল হবে? প্রশ্ন তুলছেন নিচুতলার কর্মীরা৷ -ফাইল ছবি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *