মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন, দল কিন্তু নয়! তাহলে কি নেত্রীর কোর্টে বল পাঠালেন শুভেন্দু?

সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং শুভেন্দু অধিকারী। লক্ষণ তেমনই।

 

কলকাতা: বিগত কয়েক মাসের সমস্ত জল্পনা আজ একা হাতে স্তব্ধ করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শুভেন্দু অধিকারী। অবশেষে, মন্ত্রিত্ব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। এর আগে রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা ত্যাগ করেছেন শুভেন্দু। অতএব, এই মুহূর্ত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে প্রায় সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। এখানে ‘প্রায়’ বলার কারণ, শুভেন্দু অধিকারী শুধুমাত্র মন্ত্রিত্ব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, দল থেকে নয়। সুতরাং বলা যেতে পারে, এবারে হয়তো বাংলা রাজনীতিতে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং শুভেন্দু অধিকারী। লক্ষণ তেমনই। 

‘মানুষের কাজ করতে কোন পদ লাগে না’, চলতি বছরের বিজয়বার্তায় এই মন্তব্য করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সকলেই জানেন, এর আগে একাধিক পদ হারিয়েছেন তিনি। দলের মধ্যে থেকে বিদ্রোহ করেছেন। বিগত কয়েক সপ্তাহে তিনি যে জনসভা গুলি করেছেন, সেই জনসভার ভাষণ নজর রাখলে স্পষ্ট বোঝা যাবে তার দল বিরোধী বার্তা। পরোক্ষভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু। বিগত কয়েক মাস ধরে শুভেন্দু যে আচরণ করে গিয়েছেন তাতে কার্যত স্পষ্ট ছিল তিনি তৃণমূল ছাড়বেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার মন্ত্রিত্ব ত্যাগ এমন কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

তবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এটা, শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দল ছাড়তে পারতেন, কিন্তু তা তিনি করেননি। অর্থাৎ পারতপক্ষে শুভেন্দু অধিকারী নিজে চাইছেন তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করুক। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু কারণ জানাতে হবে দলকে। এই কারণেরই অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান এমনটাই। অতএব, তৃণমূল কংগ্রেসের যখনই সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে বহিস্কার করবে, তখন থেকেই সম্মুখসমরে চলে আসবে তারা। সে ক্ষেত্রে তিনি যদি বিজেপিতে যোগদান করেন তাহলে তো আগামী দিনের নির্বাচনের উত্তাপ আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু যদি তিনি বিজেপিতে যোগ না দিয়ে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও তৃণমূলের অস্বস্তি এতোটুকু কমবে না। বরং বলা যায়, মমতার দল থেকে সম্পূর্ণরূপে যদি শুভেন্দু অধিকারি বেরিয়ে যান, তাহলে তিনি যাই সিদ্ধান্ত নিন না কেন, চাপে পড়বে সেই তৃণমূল কংগ্রেস। 

উল্লেখযোগ্য বিষয়, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় দাবি করেছেন, মন্ত্রিত্ব পদ থেকে ইস্তফা দিলেও শুভেন্দু দলের বিধায়ক পদ ছাড়েননি; এখনও তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য পদে রয়েছেন। অর্থাৎ এখনো শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আপাতত আশা দেখলেও শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ যে খুব একটা ভালো নয় তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে, সৌগতবাবু বলেন, যতক্ষণ শুভেন্দু দলে আছেন ততক্ষণ আশা করব এবং চেষ্টা চালিয়ে যাব৷ এটাই দলের নির্দেশ৷মন্ত্রিত্ব থেকে এই পদত্যাগকে কী ভাবে দেখছে দল? সৌগতবাবু বলেন, ‘‘এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলেই মেনে নেওয়া হয়েছে৷ এই সিদ্ধান্তে আমি ব্যক্তিগত ভাবে দুঃখিত৷ ’’ তবে এটা চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নয় বলেই উল্লেখ করেন সৌগতবাবু৷ তাঁর কথায়, চূড়ান্ত হচ্ছে দল ছেড়ে দেওয়া৷ দল না ছাড়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে৷- ফাইল ছবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 6 =