নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচনের আগে একের পর এক সমীক্ষা সামনে এসেছে যার প্রত্যেকটিতে বিজেপির জয়জয়কার দেখানো হয়েছে। আর সেটি দেখে ৪০০ আসনের স্বপ্নে আরও বেশি মাত্রায় বিভোর হয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর সমীক্ষা রিপোর্ট সামনে এসেছে যা কিনা বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য যথেষ্ট। সেখানে যা যা বলা হয়েছে তা বিজেপির পক্ষে একেবারেই ভাল কথা নয়। সেই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল সিএসডিএস-লোকনীতি। সেখানে মূল যে বিষয়টি উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যুবসমাজ চাকরি চাইছে। তাঁরা মন্দির রাজনীতিতে আগ্রহী নন। যখন জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিষয়টি নিয়ে উচ্চ গ্রামে প্রচার করছে তখন যুব সমাজ চাকরি চাইছে। তাঁদের প্রশ্ন, আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষেও ভাল চাকরি কেন পাওয়া যাচ্ছে না? জিনিসের দাম কেন এত বেশি?
ভোটে মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু কী, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। তাতে ২৭ শতাংশ মানুষ বেরোজগারি, ২৩ শতাংশ মানুষ মূল্যবৃদ্ধি, ১৩ শতাংশ উন্নয়ন, ৮ শতাংশ দুর্নীতি, ২ শতাংশ হিন্দুত্ব, বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তি ২ শতাংশ, সংরক্ষণ ২ শতাংশ, অন্য কোনও কারণ ৯ এবং জানি না বলেছেন ৬ শতাংশ। এতেই স্পষ্ট মূল সমস্যাগুলি কতটা প্রবল ভাবে রয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে বেরোজগারি নিয়েও। গত পাঁচ বছরে কাজ পাওয়া কঠিন হয়েছে বলে মনে করেন গ্রামের ৬২ শতাংশ মানুষ, মফস্বলের ৫৯ শতাংশ এবং শহরের ৬৫ শতাংশ মানুষ। কাজ পাওয়া কঠিন হয়েছে কার জন্য? এই প্রশ্নের উত্তরে ২১ শতাংশ জানিয়েছেন কেন্দ্রের ভূমিকায় তাঁদের কাজ পাওয়া কঠিন হয়েছে। ১৭ শতাংশ রাজ্য সরকারগুলিকে দায়ী করেছেন। আর ৫৭ শতাংশ রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়কেই দায়ী করেছেন। দুর্নীতি ইস্যুতেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গত পাঁচ বছরে দুর্নীতি বেড়েছে বলে ৫৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন। একই রয়েছে বলে মনে করছেন ১৯ শতাংশ মানুষ। আর দুর্নীতি কমেছে বলে মনে করছেন ১৯ শতাংশ মানুষ।
মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতেও কেন্দ্রের বিপক্ষে মত জানিয়েছেন দেশের বড় অংশের মানুষ। ৭১ শতাংশ মনে করছেন গত পাঁচ বছরে জিনিসের দাম বেড়েছে। একই আছে বলে মনে করছেন ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে ১৩ শতাংশ মনে করছেন পাঁচ বছরে জিনিসের দাম কমেছে। সিবিআই-ইডি তদন্ত নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। ৩৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন সিবিআই-ইডি বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ৩৪ শতাংশ তাঁদের মতামত জানাননি। আর ৩১ শতাংশ মনে করেন আইন মেনে কাজ হচ্ছে। কাজ পাওয়া নিয়ে ৬৭ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ উদ্বেগে রয়েছেন। সেখানে হিন্দু, অন্যান্য অনগ্রসর ও তফসিলি জাতির মধ্যে ৬৩ শতাংশ মানুষ কাজ বা চাকরি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। তফসিলি উপজাতি ও আদিবাসীদের ৫৯ শতাংশ মনে করছেন গত পাঁচ বছরে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়েছে।
ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গেরুয়া শিবির ‘বিশ্বগুরু’র আসনে বসিয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মানুষ যে একেবারেই মাথা ঘামাতে রাজি নন, এমনই তথ্য উঠে এসেছে সমীক্ষায়। ৬৭ শতাংশ মানুষের জি-২০ সম্মেলন নিয়ে কোনও ধারণাই নেই। সবমিলিয়ে বিজেপির পক্ষে সত্যিই কতটা জনসমর্থনের ঢেউ আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল এই সমীক্ষা। রাজনীতির কারবারিরদের একাংশ মনে করছেন এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে যদি ভোটাররা ভোট দেন তবে ফলাফলে অনেক অদল বদল হয়ে যেতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে কৌতূহল থেকেই যাচ্ছে।