নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল, সেই গোটা নির্দেশের উপর সোমবার স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। শুধুমাত্র অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি বিষয়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে একটা প্রশ্ন উঠছেই, তা হল রাজ্য সরকার অবশ্যই চাইবে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক। সেখানে তদন্ত রাজ্য সরকার নিজে করুক, বা কেন্দ্রীয় সংস্থা করুক, তাতে তো কোনও অসুবিধা থাকার কথা নয়? কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে সিবিআই বা ইডি তদন্ত করলেই তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চলে যাচ্ছে রাজ্য। রাজ্য এমন আচরণ কেন করছে তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। তবে কী কোনও কিছু লুকোতে চাইছে রাজ্য? কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্ত করলে এমন গুরুতর তথ্য সামনে আসবে যাতে সমস্যায় পড়বে তৃণমূল সরকার? সেই কারণেই কী তাদের আটকানোর চেষ্টা চলছে বারবার? সোমবার এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এই প্রশ্নগুলি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। যার উত্তর খুঁজতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে রাজ্য। প্রধান বিচারপতির কড়া পর্যবেক্ষণ, “প্যানেলে নাম না থাকা সত্ত্বেও যেভাবে নিয়োগ করা হয়েছে সেটা জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়। বেআইনি নিয়োগ হয়েছে এটা জানার পরেও কেন সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরিতে সায় দিল মন্ত্রিসভা? আদালতের উপায় না থাকলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। দুর্নীতির সুবিধা কে বা কারা পেয়েছেন খুঁজে বের করতে হবে। দোষীদের খুঁজতে হবে। কমিশন কীভাবে যোগ্য-অযোগ্য নির্ধারণ করল? আসল ওএমআর শিট তো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই উপায় না থাকাতেই হয়ত হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত।” এই সমস্ত প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর কী রাজ্য সরকারের কাছে আছে?
প্রত্যেকটি রাজ্যের প্রশাসন চাইবে তাদের বিরুদ্ধে যেন সামান্যতম দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে। আর অভিযোগ উঠলেও তার তদন্ত করে দ্রুত দোষীদের শাস্তি দিতে চাইবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, এটাই তো হওয়া উচিত। সেই জায়গায় যদি রাজ্য প্রশাসন বা কেন্দ্রীয় এজেন্সি সঠিক তদন্ত করে, তদন্তের কাজে একে অন্যকে সাহায্য করে, তাহলে সেখানে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু সেই বিষয়টি বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলায় দেখা যাচ্ছে না। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে সন্দেশখালি মামলা, বারবার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। এই আবহের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের উপর সুপ্রিম কোর্ট এখনই স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় নিঃসন্দেহে চরম অস্বস্তিতে পড়ল তৃণমূল।