বাবা-মা’কে না জানিয়েই বদলে ফেলেছিলেন স্কুল! কেন এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুনীল?

বাবা-মা’কে না জানিয়েই বদলে ফেলেছিলেন স্কুল! কেন এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুনীল?

 কলকাতা: তিনি ফুটবল মাঠের শিল্পী। তাঁর পায়ের জাদুতে বারবার মুগ্ধ হয়েছে ফুটবল প্রেমীরা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৯২টি গোলের মালিকও তিনি! সেঞ্চুরি থেকে আর মাত্র আট ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ভারতের ফুটবল কিংবদন্তী সুনীল ছেত্রী। আপাতত ভারত অধিনায়ক যে ফর্মে রয়েছেন, তাতে সুনীলের ‘সেঞ্চুরি’ দেখার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না ফুটবল দুনিয়াকে। 

তিনি ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে সর্বাধিক গোলদাতা তো বটেই, বিশ্ব ফুটবলের দুই তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিওনেল মেসিকেও গোল সংখ্যায় তাড়া করছেন ভারতের সুনীল। ফুটবল মাঠে তিনি বারবার সাহসিকতার ছাপ রেখেছেন। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, ব্যক্তিগত জীবনেও অদম্য সাহসী তিনি। ছেলেবেলা থেকেই তিনি দৃঢ়চেতা৷ নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দু’বার ভাবতে হতো না তাঁকে। এর জন্য বেশ কয়েকবার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেও যেতে হয়েছে সুনীলকে। আর এই বিরোধিতার নেপথ্যে ছিল একমাত্র ফুটবল। ফুটবলের জন্যেই দিল্লিতে নিজের স্কুল বদলে ফেলেছিলেন সুনীল। বাবা-মাকে না জানিয়েই স্কুল ট্রান্সফারের আবেদন জানিয়েছিলেন ডাকাবুকো ছেলটা৷  ঠিক কি হয়েছিল? 

সুনীলের জন্ম ১৯৮৪ সালের ৩ অগাস্ট৷ তাঁর বাবা কেবি ছেত্রী ছিলেন ভারতীয় সেনার ইঞ্জিনিয়ার। সেই সূত্রেই সুনীল ভর্তি হন আর্মি স্কুলে৷ পড়াশোনায় বেশ বাধ্য ছিলেন৷ কিন্তু, পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর আগ্রহ ছিল ফুটবলে৷ সেই আগ্রহ থেকেই যোগ দেন স্কুলের ফুটবল টিমে৷ স্কুল থেকেই ফুটবলের হাতেখড়ি। কিন্তু আর্মি স্কুলের ফুটবল টিম তেমন মজবুত ছিল না। বড় কোনও টুর্নামেন্টে বেশিদূর এগোতে পারত না। অধিকাংশ সময়েই গ্রুপ স্টেজ থেকে বিদায় নিতে৷ খুব বেশি হলে কোয়ার্টার ফাইনাল৷ অথচ ফুটবলে অন্যান্য স্কুলগুলির সাফল্য ছিল রীতিমতো ঈর্ষণীয়। সেই সব স্কুলের হয়ে ফুটবল পায়ে দৌড়তে চাইতেন সুনীল৷ কিন্তু বাবা-মা যে মেনে নেবেন না! তাই  তাঁদের না জানিয়েই স্কুল বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি৷ আর্মি স্কুল ছেড়ে ভর্তি হন দিল্লির মমতা মডার্ন স্কুলে। দেশের তারকা ফুটবলারের কথায়, “আর্মি স্কুল ও মমতা মডার্ন স্কুলের মধ্যে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তর ফারাক ছিল। বহু মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেই স্কুল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিই। তাছাড়া বাবা-মার কাছে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদও ছিল। স্কুল বদলানোর পর আমি দিল্লিতে নিজের বাড়িতে থাকতাম না। থাকতাম স্কুলের হস্টেলে৷ আমার এই সিদ্ধান্তে বাবা-মা মোটেও খুশি ছিলেন না।”

হোস্টেলে গিয়ে একাকী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন সুনীল৷ তবে খেলার জন্য কখনই পড়াশোনাকে অবহেলা করেননি৷ সমানতালে পড়াশোনাও চালিয়ে যান৷ বাবা-মার কষ্ট হলেও, সেদিনের সেই সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস হয় না সুনীলের। বরং তিনি মনে করেন, সেদিন সাহস করে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই আজ সাফল্যকে ছুঁতে পেরেছেন৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *