subsidy
নয়াদিল্লি: দেশ জুড়ে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা করে কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ এবার থেকে সাধারণ মানুষ গ্যাসের সিলিন্ডার ফিরবেন ২০০ টাকা কম দামে। আর উজ্জ্বলা যোজনার আওতাভুক্ত দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা এবার থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার কিনবেন আরও ২০০ টাকা কম দামে, অর্থাৎ তাঁদের ক্ষেত্রে গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম মোট ৪০০ টাকা কমল। যে ঘটনায় দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। সামনে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ও তারপরে লোকসভা ভোট, সে কথা মাথায় রেখেই যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিরোধীদের দাবি তাদের চাপেই কেন্দ্র এটা করতে বাধ্য হয়েছে। সেই দাবি যে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না তা স্পষ্ট।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, দেশ জুড়ে কী শুধুই ভর্তুকির রাজনীতি চলতে থাকবে? রাজনৈতিক দলগুলির সবাইকে খুশি করার লক্ষ্যে, শুধুমাত্র ভোটের টানে এই ভর্তুকির রাজনীতি তো গোটা দেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। এতে যে দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি নিশ্চয়ই দেওয়া দরকার। সার থেকে জীবনদায়ী ওষুধ, এমন একাধিক ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া উচিত বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এমন এমন ক্ষেত্রে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চলছে যা কেউ আগে কল্পনাও করতে পারেনি। ভারতীয় রাজনীতি যদি আগামী দিনে আরও বেশি মাত্রায় এই খাতে বইতে থাকে, তবে অর্থনীতি আরও বেশি চাপে পড়ে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এছাড়া রয়েছে আরও বেশ কিছু সামাজিক প্রকল্প, যার মাধ্যমে উপভোক্তদের হাতে নগদ পৌঁছে যায়। আম আদমি পার্টি দিল্লি, পাঞ্জাবে বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের পাশাপাশি মহিলাদের বাস ও মেট্রো ভাড়া মকুব করেছে। কর্ণাটকে ক্ষমতায় এসেই কংগ্রেসও একই পথে হেঁটেছে। এর আগে রাজস্থান সরকার দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে পাঁচশো টাকা দামে গ্যাসের সিলিন্ডার দিতে শুরু করেছে। সামনেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। সেই ভোটমুখী রাজ্যগুলিতেও একইভাবে প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেস।
ঘটনা হল এই ধরনের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির কার্যত বিরোধিতাই করছিল বিজেপি। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত এই ইস্যুতে একাধিকবার বিরোধীদের নিশানা করেছেন। যদিও বিজেপির অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম না কমলে মহিলা ভোটারের একটা বড় অংশ লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। তাই বিজেপিকেও বাধ্য হয়ে এই রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে। সেই কারণে প্রতি বছরে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে কেন্দ্রকে। আর এভাবেই ভর্তুকির নাগপাশে বন্দি হয়ে যাচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। একবার এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে সেখান থেকে রাজ্য বা কেন্দ্র কিন্তু আগামী দিনে আর বেরোতে পারবে না। তাই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা বা কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা না করে যেভাবে ভোটের লক্ষ্যে ভর্তুকির রাস্তায় হাঁটছে বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।