ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন বাস, সংসারের হাল কন্ডাক্টরের ব্যাগ কাঁধে পাদানিতে ডলি

ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন বাস, সংসারের হাল কন্ডাক্টরের ব্যাগ কাঁধে পাদানিতে ডলি

bus conductor

হাওড়া: বেলগাছিয়া থেকে হাওড়া রুটে বাসে উঠে চমকে উঠলেন এক যাত্রী৷ কে যেন বলছেন ‘দাদা ভাড়াটা দেবেন?’ না, বাসে এই কথাটা নতুন নয়৷ তবে  মেয়েলি কণ্ঠে এমনটা যে শোনা যায় না। হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস ছাড়া মেয়ে কন্ডাক্টর নেই বললেই চলে৷ হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনেই ওই যাত্রী পিছন ফিরে চাইলেন৷ দেখলেন কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে, সাইড ব্যাগ বগলদাবা করে, একের পর এক স্টপের নাম হাঁকছেন এক মহিলা। তিনিই যে ওই বাসের কন্ডাক্টর৷ নাম ডলি৷ হাওড়ার বাসিন্দা। তিনি একদিকে শক্ত হাতে যেমন সংসারের জোয়াল সামবাল, রান্না করেন, তেমনই বাসের গায়ে চাপড় মেরে নেমেও পড়েন পথে।

এই বাস তাঁর বড্ড আদরের। লোন নিয়ে কিনেছিলেন। স্বামী কারখানায়র শ্রমিক৷ বড় সংসার তাঁর৷ একই সংসারে রয়েছে ভাই, বোন, আর বোনপো। ভেবেছিলেন, বাসটা ঠিকঠাক চললে দুঃখের দিন ঘুচবে৷ কিন্তু কিছুতেই লাভ হচ্ছিল না। উল্টে বাড়ছিল ঋণের বোঝা৷ অগত্যা নিজেই কাঁধে ব্যাগ তুলে নিলেন ডলি। শুরু করেন কন্ডাক্টরি৷ বাসের স্টিয়ারিং সামলান রাজেশ জয়সওয়াল৷ তাঁর কথায়, ‘ওঁকে আমি মালিক হিসেবে দেখি না। নিজের দিদির মত৷ উনি কন্ডাক্টর হিসেবে যে কতটা সফল, সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। কোনও যাত্রীর সঙ্গে কখনও রাগারাগি বা তর্ক করতে দেখিনি।’ কিন্তু হঠাৎ করে এই কাজ শুরু করতে সমস্যা হয়নি? ডলি  হেসে বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম একটু হতো বৈকি। অনেক নিয়মকানুনই তো  জানতাম না। তবে এখন আর অসুবিধা হয় না।’ 

এখন বাসের ইএমআই গোনার দিন শেষ। তবুও চোয়ার শক্ত করে লড়াই করেন ডলি৷ লড়াই করেন উপার্জন সঞ্চয়ের জন্য। এখন দেবীপক্ষা৷ সকলে মেতে উঠেছেন দেবী বন্দনায়৷ কিন্তু ডলির মতো দুর্গারা প্রতিদিন লড়াই করে জীবনের তাড়নায়৷ এই জীবন্ত দুর্গাদের কুর্নিশ৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *