সিঙ্গুর: বছর দশেক আগে যখন ৩৪ বছরের দীর্ঘ বাম সাম্রাজ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল, তখনও আজকের মতোই নির্বাচনী উত্তাপের সাক্ষী ছিল বাংলা। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পরাজয়ের জন্য প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি সিঙ্গুরকেও তুলে ধরেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সিঙ্গুরে শিল্প গড়ার উদ্যোগ সফল হয়নি বাম সরকারের। ক্ষমতা থেকে অপসারণের দশ বছর পরেও কিন্তু সেই স্বপ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে বাম সমর্থকদের চোখে চোখে। আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের কারিগর হিসেবে এবার সিঙ্গুর থেকে লাল ঝান্ডা হাতে লড়ছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী তথা এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য।
নির্বাচনী লড়াইয়ে আনকোরা মনে হলেও যুব রাজনীতির ময়দানে কিন্তু রীতিমতো পোড় খাওয়া নেতা সৃজন। সংগ্রামের ইতিহাসে জর্জরিত সিঙ্গুর কেন্দ্রে সাফল্যের ঠিক কতটা সুযোগ সম্ভাবনা রয়েছে তরুণ নেতার? রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণে কিন্তু উঠে আসছে চমকপ্রদ তথ্য। সিঙ্গুরে এবার সদ্য তৃণমূলত্যাগী বর্ষীয়ান নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। স্থানীয় বিজেপি সমর্থকরা যে এই ঘোষণায় একেবারেই সন্তুষ্ট নয়, তা বলাই বাহুল্য। সিঙ্গুরের গেরুয়া প্রার্থী হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণার পর থেকেই তুমুল বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে বিজেপি। দুদিন আগেই তৃণমূল নেতা হিসেবে মাধ্যমে বিরোধিতা করছিলেন এখন প্রার্থী হিসেবে তাঁরই সমর্থনে গলা ফাটাতে নারাজ কর্মীরা। ফলে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে সিঙ্গুরের বিজেপি গৃহযুদ্ধ।
অন্যদিকে সিঙ্গুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বেচারাম মান্না। ২০১১ সালে হরিপাল কেন্দ্রে ২২০০০ ভোটের বিপুল ব্যবধানে জয়ের ইতিহাস রয়েছে তাঁর। তৃণমূল আর প্রাক্তন তৃণমূল নেতার এই দ্বৈরথে জয়ের আশা দেখছেন সৃজন ভট্টাচার্য। গতকালই সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে সিঙ্গুরে প্রচারে নেমেছিলেন বর্ষীয়ান বাম নেতা হান্নান মোল্লা। সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে কৃষক সভার এই সাধারণ সম্পাদক তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দুই আপাত হেভিওয়েট, রাজনীতিতে ঘুঘু নেতৃত্বের মাঝে সৃজন ভট্টাচার্যের সাফল্যের সম্ভাবনা একেবারেই ফিকে নয়, বরং উজ্জ্বল, মনে করছে বাম শিবির।