কলকাতা: বাঙালির ‘দাদা’ থেকে ‘মহারাজ’ একজনই, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বাঁহাতে দুনিয়া শাসনে সাক্ষী সব ক্রিকেটপ্রেমী। ভারতীয় বাঙালি যদি ফুটবল বলতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল বোঝে, তবে ক্রিকেট বলতে একটা নামই, ‘দাদা’৷ ক্রিকেট দল তৈরিতে সৌরভের অবদান কপিলদেব থেকে এমএস ধোনি, সকলেই এক কথায় স্বীকার করেন। অবশ্য ক্রিকেট জীবনের গ্রাফও যে সরলরেখায় চলেছিল তা নয়, কখনও লর্ডসে জার্সি উড়িয়েছেন, আবার কখনও অধিনায়কের পদ ছাড়ার পর দল থেকে বাদও পড়েছেন। ফিরেও এসেছেন দলে সব বাধা কাটিয়ে৷ ব্যাটে-বলে দেখিয়েছেন সাফল্যের ‘টাইমিং’! এবার ৪০ বছরের জীবনে মৃদু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও ‘গোল্ডেন টাইমিং’ দেখিয়ে ফের একবার চমকে দিলেন ‘মহারাজ’!
আজ সকালে জিম করতে করতে করতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ‘মহারাজ’! আচমকা ব্ল্যাকআউট হয়ে অসুস্থ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ তৎক্ষণাৎ তাকে ‘গোল্ডেন’ আওয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সৌরভ ট্রিপল ভেসেজ ডিসিজ নামে হার্টের একটা রোগে ভুগছেন দাদা। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল টিম তৈরি করা হয়৷ পরে তৈরি করা হয় সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড৷ শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা যায়, সৌরভের হার্টে ব্লকেজ তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার। সেই মতো দুপুরে তার হার্টে একটা স্টেন্ট বসে, ব্লকেজ খুলে দেওয়া হয়। হাসপাতাল বুলেটিনেও উল্লেখ করা হয়েছে গোল্ডেন আওয়ারে না এলে বড় বিপদের সম্ভবনা থাকত৷
সৌরভের স্বাস্থ্যের অবনতির কারণের পেছনে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মত দিয়েছেন। অনেকের মতেই এই বয়সে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি থেকে স্বাস্থ্যের এই অবনতি হতে পারে। কিন্তু যে মানুষটা এতগুলি বছর ধরে দুনিয়া শাসন করে এল, তাকে কীভাবে মানসিক চাপ কাবু করতে পারে! অপরেশন থিয়েটার থেকে বেডে দেওয়ার পরই সৌরভ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা শুরু করেন। মহারাজকে দেখতে বিভিন্ন মহলের মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমান। দাদা প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করেন, উলটে নিজে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অন্যদের শরীরের খোঁজ নিয়ে গেছেন, হাসি মুখে কথা বলেছেন, চিকিৎসকদের সাহস জুগিয়ে গেছেন অনবরত।
সালটা ২০০২, আইসিসি চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি, প্রতিপক্ষ আবার ইংল্যান্ড। ওপেন করছেন সৌরভ। দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাট করছেন সৌরভ আর শচীন। ৮৮ বলে দরকার ৪৬ রান। ৬৬ বল বাকি থাকতে দরকার ১০ রান। ঠিক গোল্ডেন টাইমিংয়ে পরের বলেই বাঁহাতি ব্যাটে বল গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। তার পরের বল আবার বাউন্ডারির বাইরে। অধিনায়ক পদ ছাড়ার পর বাদ যান জাতীয় দল থেকে। ফিরে আসেন আবার নাগপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সৌরভের ৯৮ রানের ইনিংসে ভর করে ম্যাচ জেতে ভারত।
আবার ২০০২-তে ইন্ডিয়া ইংল্যান্ডের ম্যাচ, লর্ডসের মাঠে ফাইনাল ম্যাচে আট উইকেট হারিয়ে ভারতের দরকার চার বলে দুই রান। অধিনায়ক তখন ড্রেসিং রুম থেকে মাঠের দিকে তাকিয়ে। জাহিরখান তিনবল বাকি থাকতে দুই রান নিয়ে নিলে ড্রেসিং রুমে একটা মানুষই বেরিয়ে এসে জার্সি খুলে ওড়াতে থাকেন, তিনিই মহারাজ। ঊদ্ধত্ব, বিনয় এবং সাহস নিয়ে যে মানুষ দুশো বছর পরাধীন করে রাখা ইংল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে দেশের সম্মান অর্জন করে এনেছেন, সেই মানুষ এবারও ‘গোল্ডেন আওয়ারে’ হার্ট অ্যাটাককে গ্যালারিতে ছুড়ে ফেলে ফের দাদাগিরি চালিয়ে যাবেন৷