কলকাতা: একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিরোধীরা যেভাবে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে অনেকটাই তারা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকটাই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে বাম-কংগ্রেস। সবচেয়ে বড় কথা বিগত দু’বছরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে বিপর্যস্ত শাসক দল। দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। সিবিআই-ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন আরও অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে সিএএ চালু হওয়ায় মতুয়া অধ্যুষিত লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে দুর্দান্ত ফলের আশা করছে বিজেপি।
সব মিলিয়ে রাজ্যে শাসক দল যথেষ্ট কোণঠাসা বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত। কিন্তু তৃণমূলের আশা এই লোকসভা নির্বাচনে তারা অভূতপূর্ব ফল করবে। বিভিন্ন ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা যেভাবে বিজেপিকে গতবারের থেকে বেশি আসন দেখিয়েছে বাস্তবে তার উল্টোটাই হবে বলে তৃণমূলের দাবি। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রধান ভরসা একের পর এক সামাজিক প্রকল্প। বিরোধীদের অভিযোগ তৃণমূল তাদের না জেতালে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প বন্ধ করে দেবে বলে প্রচার চালাচ্ছে। এমনকী তৃণমূলকে বড় ব্যবধানে জেতালে আবাস যোজনার প্রকল্পের টাকা পেতে অসুবিধা হবে না বলেও তৃণমূলের একাংশ প্রচার চালাচ্ছে বলে বিরোধীদের দাবি। অর্থাৎ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধার কথা তৃণমূল প্রবল ভাবে তুলে ধরছে প্রত্যেকটি লোকসভা কেন্দ্রের কোণায় কোণায়।
ভোটারদের মধ্যে এই প্রচারের যথেষ্ট প্রভাব পড়ছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে। এটা লোকসভা নির্বাচন। তাই তৃণমূল বেশি আসনে জিতুক বা হারুক, তার সঙ্গে সামাজিক প্রকল্প চালু বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। যা চলছে তা আগের মতোই চলবে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ তৃণমূল নাকি প্রচার করছে যে, তারা হেরে গেলে সমস্ত প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
এমনকী মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল যখন হেরে গিয়েছিল তার পরে নাকি সেখানকার বিস্তীর্ণ অংশে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের টাকা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছিল বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষ যেভাবে পাচ্ছেন, তাতে তারা চট করে তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এটা আশা করা যায় না। আর এই বিষয়টাই সবচেয়ে ভরসা জোগাচ্ছে তৃণমূলকে। তাই সামাজিক প্রকল্পগুলি একের পর এক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলকে নিশ্চিতভাবে সুবিধা দেবে বলেই শাসক দল মনে করছে।