ধর্মতলায় মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ মহিলা চাকরিপ্রার্থীর, সৌগত বললেন, নাটক হচ্ছে!

ধর্মতলায় মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ মহিলা চাকরিপ্রার্থীর, সৌগত বললেন, নাটক হচ্ছে!

Protest

কলকাতা:  হকের চাকরির দাবিতে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত রাস্তায় পড়ে থেকে আন্দোলন করে চলেছে তাঁরা৷ কারও বাবা মারা গিয়েছে, কারও মা৷ কেউ বা নিজেই হারিয়ে গিয়েছে এই পৃথিবী থেকে৷ কিন্তু, চাকির মেলেনি৷ আজও বঞ্চিত-অবহেলিত ২০১৬ সালের এসএলএসটি-র চাকরিপ্রার্থীরা৷ নিরন্তর চলছে তাঁদের আন্দোলন৷ দেখতে দেখতে সেই আন্দোলনের ১০০০ দিন পার। ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে দাঁতেদাঁত চিপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা৷ এমতাবস্থায় শনিবার এক অভিনব আন্দোলনে সামিল হলেন তাঁরা৷ ধর্নামঞ্চেই মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন এক মহিলা চাকরিপ্রার্থী। নাম রাসমনি পাত্র৷  তবে শুধু ওই মহিলা প্রার্থীই নন, এদিন নিজেদের হকের চাকরির দাবিতে মাথা ন্যাড়া করছেন অন্যান্য বেশ কিছু এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরাও।

চুল কামিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাসমনি। সরকারের উদ্দেশে তাঁর আর্জি, অবিলম্বে তাঁর মতো চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হোক। শাসক এবং বিরোধীদের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আপনারা সবাই আমাদের সমস্যার সমাধান করুন…। কেউ কি শুনতে পাচ্ছেন? আমাদের চাকরি দিন।’’  

চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত যে এই লড়াই চলবে, তা আন্দোলনকারীদের কথাতেই স্পষ্ট৷ ধর্নামঞ্চে উপস্থিত এক চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘‘যত দিন না ন্যায্য চাকরি পাচ্ছি, ততদিন আমরা এখন থেকে সরব না৷ এভাবে দিন সংখ্যা বাড়তেই থাকবে৷’’ তাঁর কথায়, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন নারী, সেই রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীকে হকের চাকরির জন্য মাথার চুল ফেলতে হচ্ছে৷ এটা সকলের কাছেই লজ্জার৷ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও এই বিষয়টা যদি লজ্জার হয়ে থাকে তাহলে হয়তো ১০০১তম দিনটা আমাদের আর এখানে বসতে হবে না৷’’ 

চোখের জলে রাসমনি পাত্র বলেন, ‘‘সরকার এবং বিচারব্যবস্থার দীর্ঘ সূত্রিতার প্রতিবাদ জানিয়ে মুণ্ডন করেছি৷ তবে আরও একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে৷ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা যাতে সুন্দর জীবন পান তার জন্য এই চুল আমরা দান করছি৷’’ কিন্তু, এভাবে আন্দোলন করাটা সহজ নয়৷ এর জন্য অদম্য সাহস লাগে৷ সেই সাহস এল কোথা থেকে? রাসমনি বলেন, ‘‘এখানে আসার পর থেকে আমরা একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছে৷ সকলের সঙ্গে আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শেয়ার করি৷ এখানে এমন অনেকে আছেন যাঁদের বাবা-মা মারা গিয়েছেন৷ কেউ নিজে মারা গিয়েছেন চাকরির দাবি করতে করতে৷ অনেকে আছে যাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে৷ সকলের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ৷ সকলের কথা ভাবে এবং নিজের চাকরির দাবিতেই চুল কেটেছি৷’’ তাঁর কথায়, দৈহিক সৌন্দর্যটাই সৌন্দর্য নয়, কর্ম ও স্বনির্ভরতাই জীবনকে সুন্দর করে তোলে৷’’ 

রাসমণিদের অভিযোগ, যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অযোগ্যরা চাকরি করছেন। রয়েছে আইনি জটও৷ এই জট কাটানোর ক্ষমতা রয়েছে কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে৷ বুকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক চাকরিপ্রার্থী রাসমণিকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘বলতে পারেন আর কী কী ভাবে প্রতিবাদ করলে আমরা চাকরি পাব!’’ আর এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘এখন মাথার চুল দিলাম৷ এ বার চাকরির দাবিতে জীবনও দেব। তখন হয়তো চাকরি দেবে এই সরকার!’’ 

২০১৬ সালের এসএলএস-টি পরীক্ষার নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি সরকার৷ অভিযোগ, সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির থাকা প্রার্থীদের অবৈধ ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসএমএস-এর মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে। ২০১৯ সালে টানা ২৯ দিন অনশন করেছিলেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। সেই সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরির প্রতিশ্রুতিও দেন৷ কিন্তু এর পরেও তাঁরা চাকরি পাননি৷ এই অভিযোগ নিয়ে ফের শুরু হয় আম্দোলন৷ কয়েকশো যুবক-যুবতী আন্দোলনে যোগ দেন। ২০২১ সালে সল্টলেকে ১৮৭ দিন ধর্না আন্দোলন চলে। তার পর হাজারটা দিনরাত কেটেছে রাস্তায়। আন্দোলনের ১০০০ তম দিনেই অন্য রকম প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেন রাসমণিরা। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাফ জানান, এসএলএসটি-র বিষয়টি বিচারাধীন৷ আদালতের নির্দেশেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ 

এদিকে, চাকরিপ্রার্থীদের এহেন প্রতিবাদ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়৷ তিনি বলেন, ‘‘নাটক চলছে।’’ পাল্টা কটাক্ষ করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে দুঃশাসন, কুশাসন চলছে।’’

চাকরি প্রার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জাতীয় কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা। এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা৷ শিক্ষাব্যবস্থার যে পরিণতি হয়েছে, তাতে আমরা লজ্জিত৷ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাই জেলে চলে গিয়েছে৷’’ 

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘কলকাতার রাজপথে ১০০০ তম ধর্নার দিনে মহিলা-সহ বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা নিয়োগের দাবিতে মস্তক মুণ্ডন করে প্রতিবাদ জানালেন। এ আমাদের লজ্জা! আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত না করে নিয়োগ দুর্নীতির সমস্ত দায় স্বীকার করে অবিলম্বে এই বঞ্চিত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হোক। এই নিষ্ঠুরতা কোনও ভাবেই আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =