দিল্লি: ৮ মার্চ। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তাতে কী? মায়ের কোনও বৈষম্য হয় না। তাই 'বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মা'-এর মর্যাদা পাচ্ছেন পুনের আদিত্য তিওয়ারি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সম্মানে আদিত্য নাম শুনে কি চমকে উঠলেন? আসলে মায়ের সংজ্ঞা একটু অন্যরকম আদিত্যর কাছে। তিনি বলেন, 'যে মানুষটির কাছে সন্তান সবচেয়ে বেশি ভালবাসা, নির্ভরতা ও সুরক্ষা পায়, সন্তানের কাছে সে-ই মা। যেমন অবনীশের কাছে আমি।' শুধু কি কথার কথা? বেঙ্গালুরুর 'ডব্লিউ এমপাওয়ার' সংগঠনটি কেন 'শ্রেষ্ঠ মা'-এর মর্যাদা দিচ্ছে আদিত্যকে?
'সিঙ্গল ফাদার' কথাটির সঙ্গে পরিচিতি নেই, এমন মানুষ বোধহয় নেই। আদিত্যের যে পরিচয় পেতে সবচেয়ে বেশি ভাললাগে, সেটি হল তিনি অবনীশের বাবা। বায়োলজিক্যাল চাইল্ডের থেকে আলাদা কিছু নয় অবনীশ। আদিত্য আসলে সিঙ্গল ফাদার। হোমে দেখে আসা ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছোট্ট অবনীশের প্রতি মায়া জন্মেছিল আদিত্যর। মাত্র ২৬ বছর বয়স তখন। যে বয়সে জীবনের নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব শেখার শুরু হয়, সেই বয়সেই আদিত্য কাঁধে নিয়েছিলেন দায়িত্ব। সবকিছু ভুলে, সব ঝক্কি মিটিয়ে অবনীশকে নিজের কাছে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। অবনীশকে বড় করার দায়িত্ব পালন করতে ছাড়তে হয়েছে চাকরিও। তাতেও আক্ষেপ নেই আদিত্যর। বরং তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, চাকরি ছাড়ায় তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়নি। বরং বদলে গেছে। তাঁর কথায়, 'এখন আমি বিশেষভাবে সক্ষম বাচ্চাদের বাবা-মায়ের কাউন্সেলিং করাই। তাঁদের জন্য ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। এখন এটাই আমার জীবন। আর অবনীশ আমার অনুপ্রেরণা।' ডাউন সিন্ড্রোম সম্মেলনে কলকাতাতেও পা রেখেছিলেন আদিত্য। তিনি পছন্দ করেন এই শহরকে।
'অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে ভাললাগার।' তাই তো 'বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মা' হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছেন আদিত্য তিওয়ারি। অবনীশকে মায়ের মতো একা হাতে সামলে চলেছেন তিনি। দু'বছর আগে বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রীও জানেন স্বামীর ভাললাগার ক্ষেত্রটাকে। বোঝেনও। একদিন বড় হয়ে অবনীশ তাঁর বাবাকে বলতেই পারেন, 'তুমি মায়ের মতো ভাল'।