sheikh hasina
কলকাতা: বাংলাদেশের মসনদে আরও একবার মুজিবর-কন্যা৷ এই নিয়ে টানা চতুর্থবার সে দেশে সরকার গড়তে চলেছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফল প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী পক্ষ তথা পূর্বতন শাসক দল বিএনপি ভোটে অংশই নেয়নি। তারা ভোট ময়দানে নামলে শতাধিক আসনে পরাজিত হতো আওয়ামী লীগ৷ সেক্ষেত্রে সরকার গড়লেও সংসদে থাকত বিরোধীদের কড়া টক্কর৷ কিন্তু দেখা গেল এই নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বলতে কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নামসর্বস্ব কয়েকটি রাজনৈতিক দল ছাড়া কেউ নেই। ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যে ফের সরকার গঠন করবে, তা কর্যত ছিল সময়ের অপেক্ষা৷ শুধু তাই নয় এবারের নির্বাচনে যে সকল বিরোধী নির্দল হিসাবে লড়াই করেছেন, তাঁরা খুব শীঘ্রই সরকারে সামিল হবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া কোটালিপাড়া) কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে হারিয়েছেন তিনি৷ ক্ষমতায় ফিরছে তাঁর দল৷ তবে আওয়ামী লিগের নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা৷ তাদের অভিযোগ, ‘এখানে কোনও ভোটই হয়নি৷’ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ১২ কোটি ভোটারের ৫০ শতাংশ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, ভোট পড়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। তাতে কী৷ জয়ের উন্মাদনা এখন হাসিনা শিবিরে৷ ওপাড় বাংলায় উড়ছে সবুজ আবির৷ সঙ্গে দেশের পতাকা হাতে উদ্দাম নাচ৷ তারস্বরে বাজছে প্রচার সঙ্গীত ‘নৌকা নৌকা’ গান৷ বলে রাখি আওয়ামী লীগের প্রতীক চিহ্ন নৌকা৷ এদিকে, ‘ইগল’, ‘ট্রাক’ অথবা ‘কাঁচি’ (প্রতীক) নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমে ‘নৌকা’ ডোবানো স্বতন্ত্রদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতা। দলনেত্রী শেখ হাসিনা আগেই ঘোষণা করেছেন, জয়ীরা দলের ফিরতে চাইলে দরজা খোলা৷ ফলে নৌকা থেকে ছিটকে যাওয়া প্রার্থীরা ফের নৌকায় সওয়ার হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷
বিএনপি, জামাতে ইসলামি এবং ‘সমমনা’ দলগুলি ভোট বয়কট করে শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছিল৷ তার মধ্যেই হয়েছে সরকার গড়ার লড়াই৷ এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই ভোটের ফলাফলকে ছাপিয়ে নজর কেড়েছে ভোটের হার। বিরোধীদের বয়কটের ডাক অগ্রাহ্য করে কার্যত ‘প্রতিদ্বন্দ্বী হীন’ নির্বাচনে কত মানুষকে ভোটকেন্দ্রে টানা যায়- সেটাই ছিল আওয়ামী লিগের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। দিনের শেষে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, সব কেন্দ্র মিলিয়ে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ যা ডিস্টিংশন নিয়ে পরীক্ষায় পাশ বলেই মনে করছে শেখ হাসিনার দল৷
এই নির্বাচনে ভোট শতাংশ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ ভোট শতাংশ কম হলে বিএনপি-জামাতরা হাসিনার দলকে জনবিচ্ছিন্ন বলে দাগানোর চেষ্টা শুরু করে দিল৷ একইসঙ্গে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি শক্তি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত৷ যা চাপে ফেলতে পারত হাসিনা সরকারকে৷ তবে সহ বাধা পেরেয়ি শেষ হাসি হাসলেন হাসিনা৷
নির্বাচনে শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বিপিল ভোটে জয়ী হননি৷ তাঁর দলের অনেকেই বাজিমাত করেছেন৷ প্রচারের খামখেয়ালি আচরণ, ভোটের দিন কমবয়সী এক যুবক কাছে চলে আসায় কষিয়ে থাপ্পর-সব মিলিয়ে বিতর্কের শিরোনামে ছিলেন আওয়ামী যোদ্ধা শাকিব আল হাসান৷ তিনি ভোট ময়দানে ছক্কা হাঁকিয়েছেন৷ ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়েছেন বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার৷ বিপুল ভোটে জিতেছেন ‘নুর ভাই’, বর্ষীয়ান তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু-ও।
তবে বেশ কিছু অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে৷ ১৩টি বুথের ভোট বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিপদ খারিজ করে দেয় সে দেশের নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুন্সিগঞ্জে ভোটের বলি এক। গুলিবিদ্ধ দুই৷ এই কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে গোটা বাংলাদেশের ভোট শান্তিপূর্ণ৷