কেন সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে শংকর, রিঙ্কুরা? সৈইফুদ্দিন, ব্রতীনরা ঠিক কী কারণে পার্টি ছেড়েছিলেন? মিল আছে কী?

কেন সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে শংকর, রিঙ্কুরা? সৈইফুদ্দিন, ব্রতীনরা ঠিক কী কারণে পার্টি ছেড়েছিলেন? মিল আছে কী?

দেবময় ঘোষ: সিপিএম থেকে কেন বিজেপিকে গিয়েছেন এত নেতা? দল পরিবর্তনের উদাহরণ অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে? কিন্তু রাজ্যের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, এই ভিন্ন মতাদর্শে যাত্রা একটি বড় অংশের বাম মনস্কদেরও চোখে লাগছে। শুধুই কী অর্থের টানে ভিন্ন মতাদর্শে গমন? নাকি অন্য কারণও রয়েছে? বাম জনতার সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, দীর্ঘদিন মনে জমতে থাকা অসন্তোষ মতাদর্শের উল্টোপথ গমনের অন্যতম কারণ। বিজেপির প্রার্থী তৈলিকা ঘোষণার কয়েকদিন আগেও শিলিগুড়ির প্রার্থী শংকর ঘোষ ওই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের হয়ে দেওয়াল লিখেছেন। গণনাট্ট সঙ্ঘ থেকে পার্টিতে আসার পর দীর্ঘদিন অশোকবাবুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন। শংকরকে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র-ইন-কাউন্সিল  নিযুক্ত করা হয়েছিল। যাদবপুরে সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী রিঙ্কু নস্কর দীর্ঘদিন বাং রাজনীতি করেছেন। তিনি জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। সুজনবাবুর সঙ্গেই দক্ষিণ২৪ পরগণায় রাজনীতি করেছেন।

অতীতেও সিপিএম থেকে বিজেপিতে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ব্রতীন সেনগুপ্ত বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন।  তিনি নিজের মতাদর্শের পরিবর্তন করেছিলেন। সুতরাং, রিঙ্কু বা শংকর ঘোষ নতুন পথের পথিক নন। শেষ লোকসভা নির্বাচনেও সিপিএমের খগেন মুর্মু বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে লড়াই করে সাংসদ হয়েছেন। হয়তো আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। সিপিএম খেকে তৃণমূলেও গিয়েছেন রেজ্জাক মোল্লা। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটে মন্ত্রীও ছিলেন। বহু বছর ধরে যে কমরেডরা কাস্তে-হাঁতুড়ি সমেত লাল পতাকা নিয়ে জনসমক্ষে প্রচারে বেরিয়েছিলেন – তারা নিজেদের পতাকা কী করে এত সহজেই বদলালেন, সে প্রশ্ন উঠেছে বা উঠবে। এক সময়ের দাপুটে সইফুদ্দিন চৌধুরী নিজের রাজনৈতিক দল করেছিলেন। আবু আয়েস মণ্ডল বা রাধিকারঞ্জন প্রামাণিক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।

এক সময়ের এই সব কমরেডদের পার্টি ছাড়ার কারণ হিসাবে সিপিএমের মধ্যেই বিকল্প মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণই প্রকট হয়ে ওঠে। সিপিএমের উচ্চ নেতৃত্বের ইয়েস ম্যান হতে না পারা – সইফুদ্দিন, ব্রতীনদের পার্টি ছাড়ার কারণ হিসাবে দেখা হয়েছে। রাধিকারঞ্জন প্রামাণিক সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ২০০৩ সালে। মথুরাপুরে ১০ বছরের সাংসদ ছিলেন। ২০০৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সাংবাদিকদ নিগ্রহের প্রতিবাদ করে তিনি সিপিএমের বিরাগভজন হন। তিনি পার্টি লাইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর অটল বিহারি বাজপেয়ীর ডাকা নৈশভোজে অংশগ্রহণ করে তিনি পার্টিতে প্রায় একা হয়ে যান। রাজ্যসভা থেকে সাংসদ হিসাবে অবসর নেওয়ার পর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। আজ, শংকর, রিঙ্কুরা একই ক্ষোভ বুকে নিয়ে চলেছেন। সেদিনের সইফুদ্দিন, ব্রতীন, আবু আয়েশদের ভিন্ন পথে গিয়েছিলেন।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *