shahjahan seikh
সন্দেশখালি: রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় তদন্তে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র আধিকারিকরা৷ শুক্রবার সকালে তাঁদের অন্যতম গন্তব্য ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ি৷ সেখানে পৌঁছে দেখেন দরজা বন্ধ৷ তালা খুলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা শুরু করেন ইডি-র অফিসারেরা। কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তখন পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করা তো দূরের কথা, তৃণমূল নেতার অনুগামীদের হামলার মুখে প্রাণ হাতে নিয়ে এলাকা ছাড়তে হল দুঁদে আধিকারিকদের। এমনকী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয়বাহিনীর জওয়ানরাও পালাতে বাধ্য হলেন৷ শুক্রবার সকালে সন্দেশ খালির এই ছবিটা দেখে অনেকেই মিল খুঁজে পেয়েছেন অজয় দেবগণ অভিনীত ছবি RAID-এর। আয়কর দফতরের অফিসারদের বের করার জন্য ‘রামেশ্বর সিং’-এর লোকজন যে ভাবে হামলা চালিয়েছিল, তারই যেন পুনরাবৃত্তি দেখা গেল সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায়। যেখানকার ‘রামেশ্বর সিং’ হলেন শেখ শাহজাহান। কিন্তু কে এই শাহজাহান? যাঁর জন্য সাতসকালে এভাবে দলে দলে লোক ঝাঁপিয়ে পড়ল ইডি আধিকারিকদের সরাতে৷
তাঁর পরিচয় তিনি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। গত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই পদে বসেছেন। তার আগে ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান। তবে গোড়া থেকেই তিনি ‘তৃণমূলি’ নন। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, একসময় শাহজাহান ছিলেন বামপন্থী৷ ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তিনি তৃণমূলে নাম লেখান৷ তবে তাঁর প্রভাবে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি৷ বরং দিন দিন তা বেড়েছে। স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, এই শাহজাহানের নির্দেশ ছাড়া নাকি সরবেড়িয়ার একটা পাতাও নড়ে না৷ তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তির কথাও কারও অজানা নয়৷ তাঁর বাড়িতে যেতে গিয়ে ওর আগে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। তবে শাহজাহানের টিকিও ছুঁতে পারেনি কেউ৷ এই শাহজাহান প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর ঘনিষ্ঠ বলেও এলাকায় পরিচিত৷ রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় আপাতত জেলবন্দি মন্ত্রী৷ স্কুলে নিয়োগ থেকে রেশন দুর্নীতি, রাজ্যের একাধিক নেতামন্ত্রীকে গ্রেফতার করলেও, শাহজাহানের ডেরায় পা রেখে রক্তাক্ত হতে হল ইডিকে৷
সন্দেশখালির একাধিক ভেড়ি, ইট ভাটার মালিক এই শাহজাহান আক্ষরিক অর্থেই ‘নবাব’। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তাঁর সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার দাবি ছিল, আসলে যত সম্পত্তি আছে, তা নাকি হলফনামায় দেখাননি শাহজাহান। তিনি একটি শপিং মলের মালিক বলেও দাবি করেছিলেন শুভেন্দু, পার্ক সার্কাসে নাকি রয়েছে তাঁর কোটি টাকার বাড়ি।