জেনেভা: আট মাস পেরিয়েছে করোনা সংক্রমণের। তবে এখনও তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায়নি অনেক বিষয়। ফলে করোনা থেকে বাঁচার উপায়ে বার বার বদল আনা আনছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু'। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নতুন নির্দেশিকার সঙ্গে আগের নির্দেশের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে বিশ্বের গবেষকরা চরম বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে বলে উঠছে অভিযোগ৷
গবেষকদের একাংশের মতে, করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা এখন প্রাথমিক পর্যায়েই আছে, ফলে এখনি কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে না। পরীক্ষা করে যা যা বৈশিষ্ট্য সামনে আসছে, সেই মতোই নিদান দিচ্ছে 'হু'। ফলে এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দোষারোপ করা উচিৎ নয়। অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞানী যশপাল সিংহ মালিক জানিয়েছেন, হু কর্তৃক বার বার নিদান পরিবর্তনে মানুষ দ্বিধায় পড়ছেন। এমনকি, প্রমাণিত তথ্যের ক্ষেত্রেও হু ভিন্ন মত প্রকাশ করছে। ফলে এই মহামারী অবস্থার সমাধানের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিদান অনুযায়ী আগে বলা হয়েছিল, উপসর্গহীন রোগীর থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। পরে, হু তরফে বলা হয়, সংক্রমিত রোগীর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ নেই, সম্প্রতি আবারও এই মত পাল্টে ফেলেছে হু। তেমনি, মল থেকে সংক্রমণ ছড়ায় না কিংবা বাতাসের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারেনা বলেই মত দিয়েছিল হু। সম্প্রতি এই দুই বিষয়েই মতামত পাল্টে ফেলেছে স্বাস্থ্য সংস্থা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ভেন্টিলেটরহীন জায়গায় সংক্রমিত রোগীর সঙ্গে একসঙ্গে অনেকক্ষণ থাকলে বাতাসের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে। একইভাবে আগের মত পাল্টে সংক্রামক অঞ্চলে সকলকেই মাস্ক পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছে হু।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে সার্স ও মার্স এই দুই শ্রেণিতে সংক্রমণ ঘটেছিল নির্দিষ্ট গণ্ডির ভিতর। কিন্তু বর্তমানে সার্স কোভ-২ শ্রেণিকে চিহ্নিত করা গেলেও যেহেতু এই ভাইরাসের চরিত্র একবারেই নতুন, তাই এর সম্পর্কে তথ্য জানতে একটু বেশি সময় লাগবে। পাশাপাশি এই ভাইরাস ২১৬টি দেশে ছড়িয়ে পরায় আরও সমস্যা হচ্ছে। গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন, নয়া ভাইরাস সংক্রমণের ঘটমান কালে তার সম্পর্কে তথ্য জোগাড় হতে বেশ খানিকটা সময় লাগে তা ইতিহাসেও দেখা গেছে। মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে এইডস ভাইরাসের সংক্রমণের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ১৯৮১ সালে এইডস রোগ প্রথম চিহ্নিত হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে এইচআইভি ভাইরাসকে সনাক্ত করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর কেটে গেলেও এখনও এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানা যায়নি। সেক্ষেত্রে কোভিড-১৯ তো মাত্র আট মাস পেরিয়েছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কে এ নিয়ে কাঠগড়ায় তোলার কোনও মানেই হয়না বলে মন্তব্য করেছেন, বিশ্বরূপ বাবু।