আইনস্টাইনের তত্ত্বই ঠিক, ব্রহ্মাণ্ডেরও নিজস্ব ‘শব্দ’ রয়েছেন, কান পেতে শুনলেন বিজ্ঞানীরা

আইনস্টাইনের তত্ত্বই ঠিক, ব্রহ্মাণ্ডেরও নিজস্ব ‘শব্দ’ রয়েছেন, কান পেতে শুনলেন বিজ্ঞানীরা

কলকাতা: বিশ্বব্রহ্মাণ্ড শব্দহীন। কারণ শব্দের প্রবাহের জন্য বাতাসের প্রয়োজন৷ আর মহাকাশে বাতাসের কোনও অস্তিত্ব নেই৷ আর সেই কারণেই মহাকাশে শব্দেরও কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ এতদিন এমনটাই ছিল বিজ্ঞানীদের অনুমান৷ কিন্তু, চিরাচরিত সেই ধ্যানধারণা ভেঙে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা৷ যা ব্রহ্মাণ্ডের নিজস্ব শব্দ বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা এই শব্দের নাম দিয়েছেন, ‘Background Hum’। 

একাধিক মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ফলেই সৃষ্ট হয় এই বিশেষ শব্দ। দীর্ঘ গবেষণার পর এই মহাকর্ষীয় বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন বিশ্বের একাধিক জ্যোতির্বিদ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় তথা বাঙালি বিজ্ঞানীরাও। বৃহস্পতিবার এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন তাঁরা। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চিন, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার কয়েকশো বিজ্ঞানী রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বছরের পর বছর গবেষণার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। অবশ্যই বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে সূত্রের খবর, প্রায় একশো বছর আগেই নাকি এই বিষয়ের উপর  প্রথম আলোকপাত করেছিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। তিনি জানিয়েছিলেন, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলি আলোর গতিতেই ছুটতে সক্ষম। সেই থেকেই শুরু গবেষণা।

নাসিকে অবস্থিত মেট্রিওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে এই তরঙ্গের সন্ধান পান ভারতীয় মহাকাশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইনপিটিএ। এই টেলিস্কোপটি জাপানের সহযোগিতায় তৈরি৷ তবে ২০১৫ সালে প্রথমবার মহাকাশের সুর কানে আসে মার্কিন ও ইতালীয় অবজার্ভেটরির। বিশেষে এক শব্দতরঙ্গের হদিশ পান তারা৷ জানা যায়, দু’টি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের জেরে তৈরি হয়েছিল সেই শব্দ। যদিও সেই তরঙ্গের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পাশাপাশি কম তীব্রতার বিভিন্ন মহাকর্ষীয় তরঙ্গও ব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে। যেগুলি বারবার সৃষ্টি হতে থাকে। এই শব্দে মায়াজালে তৈরি হয় এক অদ্ভুত আবহ। বৃহস্পতিবার অবশেষে সেগুলি খুঁজে পেলেন জ্যোতির্বিদরা। 

ভারতীয় মহাকাশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইনপিটিএ-তে রয়েছেন আইসার কলকাতার গবেষক, কেরলের বাসিন্দা ফজল করিম। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সরাসরি তরঙ্গ দেখতে পারি না। মৃত বা মৃতপ্রায় একাধিক তারার উপর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই তরঙ্গের অস্তিত্ব খুঁজে নিতে হয়। এই তরঙ্গের ফলে সূর্যের চেয়ে কয়েকশো কোটি গুণ বেশি ভরের তারাগুলিতে সামান্য চ্যুতি ঘটে। তখন তাল কাটে তাদের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতেও। কয়েক বছর ধরে সেই ছন্দপতনের হিসেব কষে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ইনপিটিএ অন্তত দশটি পালসার বা মৃতপ্রায় তারাকে পর্যবেক্ষণ করে। মহাকর্ষীয় তরঙ্গে যে ইঙ্গিত আমরা এখনও পর্যন্ত পেয়েছি, তা নিশ্চিত করতে আরও কয়েক বছরের গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এর থেকে জানা যাবে, আমরা বিশাল মহাবিশ্বের কোন স্পেস-টাইমে অবস্থান করছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ এই গবেষণায় রয়েছেন আরও দুই বাঙালি। তাঁরা হলেন চেন্নাইয়ের ইনস্টিটিউট অব ম্যাথামেটিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষক মঞ্জরি বাগচি (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী) এবং প্রতীক তরফদার (কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী) ৷ 

 ইউরোপীয় পালসার টাইমিং অ্যারে-এর মাইকেল কিথ সংবাদসংস্থা এএফপিকে বলেন, “আমরা এখন জেনে গিয়েছে যে মহাবিশ্ব মহাকর্ষীয় তরঙ্গে পরিপূর্ণ। ফলে ব্রক্ষাণ্ড যে শব্দহীন এ কথা আর এখন বলা যাবে না।’’


 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =