স্কুল ছুটির ঘোষণা: কেন উচ্চ মাধ্যমিকের সূচি বদল হবে না? গরমের ছুটি ঘিরে প্রশ্ন!

স্কুল ছুটির ঘোষণা: কেন উচ্চ মাধ্যমিকের সূচি বদল হবে না? গরমের ছুটি ঘিরে প্রশ্ন!

 

কলকাতা: করোনা আক্রান্ত গোটা বিশ্ব৷ করোনাকে ‘মহামারী’ বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ মুখ থুবড়ে পড়েছে শেয়ারবাজার৷ করোনা রুখতে ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ বিধি-নিষেধ জারি করেছে কেন্দ্র-রাজ্য৷ নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা৷ আর বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে সপ্তম রাজ্য হিসাবে বাংলায় স্কুল ছুটির ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর৷ রাজ্যের এই ঘোষণার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শিক্ষক মহলে৷

আজ শনিবার জরুরি ভিত্তিতে বাংলার সমস্ত স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে৷ তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ আগামী সোমবার থেকে রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে৷ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সমস্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা৷ বন্ধ থাকবে সমস্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও৷ স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেওয়ার কাজ বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে এসএসকে, এমএসকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে৷ তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়সূচিতে কোনও পরিবর্তন হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে৷ ৩১ মার্চ পরিবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

আবুটার সহ সভাপতি তরুণকান্তি নস্কর , ‘‘বর্তমান সময়ে এই ছুটির ঘোষণা অপরিহার্য৷ কিন্তু ভবিষ্যতে প্রয়োজনে স্কুলের ক্ষেত্রে গরমের ছুটি কমিয়ে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেশনের সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে শিক্ষকরা সিলেবাস শেষ করতে পারেন৷’’

শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস যদি মহামারীর দিকে এগোয়, তাহলে নিশ্চয়ই তা রোধে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেই হবে৷ শুনেছি ২৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই ভাইরাস বাঁচেনা৷ গরম ক্রমশ যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন সারা রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছুটি ঘোষণা কতটা যুক্তিযুক্ত তা স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলবেন৷ আতঙ্ক না ছড়িয়ে বাস্তব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক৷ এব্যাপারে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত৷ তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়৷’’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক স্কুল শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাইরের স্কুলের ছাত্ররা আসে৷ তাদের ঠিকানা খোঁজখবর জানা থাকে না৷ খোঁজ খবর নেওয়াও মুস্কিল৷ এমনকী অসুস্থ অবস্থাতেও তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়৷ তাই সত‍্যিকারের সংক্রমণ নিয়েও কেউ পরীক্ষা দিলেও আমরা অন্ধকারে থাকব৷ আর পরীক্ষা চলবে ২৭ মার্চ অবধি৷ ১ এপ্রিল স্কুল খুললে পরীক্ষার জন্য চালু থাকা স্কুল শিক্ষকদের থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না কেউ নিশ্চিত করতে পারেন? এই মুহূর্তে কলেজে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে৷ আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে৷ বারাসত স্টেট ইউনিভার্সিটির অধীন কলেজগুলিতে পরীক্ষা চলছে৷ এই কলেজগুলিও কি নয়া বিধির আওতায় আসবে?’’

বিজেপি টিচার্স সেলের রাজ্য কনভেনার দীপল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় হারে বেতন ও ডিএ  থেকে বঞ্চিত করে অতিরিক্ত ছুটি দিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ মেটাতে চাইছেন৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকরা ওই ধরনের মানসিকতাকে সমর্থন করেন না৷’’

অন্যদিকে, খুব প্রয়োজন না পড়লে স্কুলে আসার দরকার নেই বলে গতকালই জানিয়েছিল কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলের কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন স্কুলে করোনা সম্পর্কে সতর্ক করতে তিনটি ভাষাতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে৷ শেখানো হচ্ছে সতর্কতা অবলম্বনের পন্থা৷ আজ শনিবার স্কুল বন্ধের আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ৷

২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসে চিন থেকে আসা করোনা ভাইরাস মহামারীর আকার ধারণ করেছে৷ এশিয়া মহাদেশীয় দেশগুলির পাশাপাশি ইউরোপ, আমেরিকাতেও এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে৷ এখনও পর্যন্ত দু’লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷ মৃত্যু হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের৷ ভারতে এখনও পর্যন্ত ৮২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ মৃত্যু হয়েছে দু’জনের৷ কেরল, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে৷ এই সমস্ত রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট সরকার৷ বিহারেও বন্ধ স্কুল৷ এবার সেই তালিকায় জুড়ল বাংলার নাম৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =