কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিতে আর সুযোগ পাবেন না বিএড ডিগ্রিধারীরা৷ এবার থেকে শুধুমাত্র ডিএড বা ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তেরাই প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন৷ রায় সুপ্রিম কোর্টের। শুক্রবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, গোটা দেশ জুড়ে এই নীতি কার্যকর করতে হবে। শিক্ষামহলের একাংশের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে বিপাকে পড়বেন বহু আন্দোলনকারী৷ কারণ যাঁরা দিনের পর দিন পথে বসে আন্দোলন করছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী৷ শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পর তাঁরা কার্যত নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়তে চলেছে৷
সাধারণত বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করে থাকেন৷ সেখানে ডিএলএড এবং ডিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করে থাকেন৷ অতীতে অবশ্য পিটিটিআই-এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত আমাদের রাজ্যে। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যেহেতু ডিএলএড এবং ডিএড ডিগ্রিধারীরা প্রাথমিক স্তরে পড়ানোর জন্য বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাই শুধু তাঁদেরই প্রাথমিকে শিক্ষক পদে নিয়োগ করা উচিত। বিএড ডিগ্রিধারীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নিয়োগ করা হোক’। সুপ্রিমকোর্টের এই নির্দেশের ফলে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্যান্য রাজ্যের বহু চাকরিপ্রার্থীও বিপাকে পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য খতিয়ে দেখলে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বিএড ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা নেহাত কম নয়৷ এত দিন জাতীয় শিক্ষক শিক্ষণ পর্ষদ (এনসিটিই)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাথমিকেও আবেদনের সুযোগ পেতেন। কিন্তু ডিএলএড পাশ করা প্রার্থীদের কাছে সেই সুযোগ ছিল না। তাঁরা কেবল প্রাথমিকেই বসার সুযোগ পেতেন। এনসিটিই-র ওই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই দেশজুড়ে মামলা করেন ডিএলএড উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ডিএড বা ডিএলএড ডিগ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য নির্ধারিত। তেমনই উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিএড বাধ্যতামূলক। তাই চাকরিতে সুযোগের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কোর্স থাকা বাঞ্ছনীয়। বিএডদের যদি প্রাথমিকের চাকরিতে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ডিএলএডদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে এ রাজ্যে চলতি প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রভাবিত হবে। কারণ চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কয়েক হাজার বিএড উত্তীর্ণ প্রার্থী আবেদন করেছেন। রাজ্যে একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পর গত বছর একটি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিএড প্রশিক্ষিতরাও প্রাথমিকের চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার ডিভিশন বেঞ্চের নয়া রায়ের ফলে সেই নির্দেশ খারিজ হয়ে গেল।