সৌদি আরব: সমাজে মেয়েদের অধিকারের জন্য গলা ফাটিয়েছিলেন তিনি। বদলে দিতে চেয়েছিলেন মান্ধাতার আমলের রাজনৈতিক নিয়ম। কিন্তু একুশ শতকের আধুনিকতায় দাঁড়িয়েও যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেয়েদের অধিকারের প্রসঙ্গে ভ্রু কুঁচকায়, আরো একবার সে সত্যই প্রকাশ করেছিল সৌদি আরব। দেশের বিশিষ্ট নারীবাদী কর্মী লৌজৈন আল-হাথলৌলকে কারাবন্দী করেছিল তারা।
১০০০ দিনেরও বেশি সময় রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে জেলে কাটিয়ে চলতি মাসে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন সৌদি আরবের অন্যতম জনপ্রিয় নারীবাদী কর্মী লৌজৈন আল-হাথলৌল। এই একটি নাম বিশ্বের নারী সমানাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে বর্তমানে হয়ে দাঁড়িয়েছে অসীম গুরুত্বের অধিকারী। জানা গেছে, দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত ডিসেম্বরে মোট পাঁচ বছর আট মাসের কারাবাসের নিদান দেওয়া হয়েছিল লৌজৈনকে। কিন্তু রায়ের দেড় মাসের মাথাতেই এসেছে মুক্তি। সৌদি আরব সরকারের এই মত পরিবর্তনের পিছনে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
কিন্তু ঠিক কী কারণে কারাবন্দী করা হয়েছিল বছর একত্রিশের এই তরুণীকে?জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল দেশদ্রোহিতা এবং জাতীয় সুরক্ষা হননের অভিযোগ। সৌদি আরবের ক্রিমিনাল কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল বিচারকার্য। শেষে দেশের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে দোষী সাব্যস্ত হন নারীবাদী কর্মী লৌজৈন আল-হাথলৌল। বস্তুত, সৌদি আরবের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই চর্চা অব্যাহত। এমনকি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কও এই ইস্যুর উপর বেশ খানিকটা নির্ভরশীল। ২০২০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকালে সৌদি আরব প্রসঙ্গে জোর দিয়েছিলেন জো বাইডেন। সম্প্রতি লৌজৈনের মুক্তির বিষয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ ব্যাপারে মার্কিন বার্তার এক সপ্তাহের মধ্যেই মুক্তি পেয়েছেন লৌজৈন।
২০১৮ সালের মে মাসে লৌজৈন আল-হাথলৌলকে প্রথম আটক করে সৌদি পুলিশ। বিচার ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল তাঁকে, চলেছিল নির্যাতনও, তেমনটাই অভিযোগ লৌজৈনের পরিবারের লোকেদের। এরপর ২০২০-তে বিচার শেষে তাঁকে দেওয়া হয় সন্ত্রাসবাদীর আখ্যা। সম্প্রতি তাঁর মুক্তি আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।