নিষিদ্ধ হয়েছে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ছবিও! আর কোন ছবি নিয়ে বিতর্ক?

নিষিদ্ধ হয়েছে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ছবিও! আর কোন ছবি নিয়ে বিতর্ক?

কলকাতা: রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে ‘দ্যা কেরালা স্টোরি’। সিনেমার বিষয়বস্তু রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, আশঙ্কা করে বাঙালি পরিচালকের এই সিনেমার প্রদর্শন রাজ্যে নিষিদ্ধ করেছে নবান্ন। রাজ্য সরকারের নির্দেশকে ঘিরে ইতিমধ্যেই নানা বিতর্ক বেঁধেছে। কেউ কেউ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, কেউ আবার তীব্র নিন্দা করেছেন। কিন্তু, সিনেমা সমালোচকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে সিনেমা নিয়ে বিতর্ক বা সিনেমাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা অতীতেও হয়েছে। ‘তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজে থেকে কোনও সিনেমার প্রদর্শনী ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করেছে— সাম্প্রতিক অতীতে এটাই যা নতুন। এর আগে কোন কোন সিনেমা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল? আসুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ছবির কথা… 

মৃণাল সেন পরিচালিত ‘নীল আকাশের নীচে ছবিটি নিষিদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। সে সময় চিন বিরোধী হাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও মাস দুয়েক পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার কবলে পরেছিল সত্যজিৎ রায়ের টেলিফিল্ম ‘সদ্‌গতি’। দূরদর্শনের জন্য নির্মিত প্রথম রঙিন এই টেলিফিল্ম সেই সময় সব রাজ্যে দেখানো যায়নি। আবার, একই ভাবে পরিচালকের ‘জন অরণ্য’ ছবিটি নিয়েও বিতর্ক হয়। 

দেবানন্দ অভিনীত ‘প্রেম পূজারী’ ছবির প্রদর্শনী নিয়ে গন্ডগোল হয়েছিল শহর কলকাতায়। লাইট হাউসে ছবিটির প্রদর্শনীতে বাধা দেন নকশালপন্থীরা।

বিতর্ক দানা বাঁধে সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কাঙাল মালসাট’ ছবি নিয়েও। ছবিতে সিঙ্গুরের টাটাবিরোধী আন্দোলন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ এবং বিভিন্ন সরকারি কমিটি নিয়ে কিছু দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। যদিও ছবিটির বেশ কিছু দৃশ্যে কাঁচি চলার পর মুক্তির অনুমতি পায় প্রেক্ষাগৃহে। 

২০১৯ সালে বিতর্কের মুখে পরে অনীক দত্ত পরিচালিত ‘ভবিষ্যতের ভূত’। ছবিটি নিয়ে ‘মৌখিক নিষেধাজ্ঞা’ ঘোষণার পর মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই সময় রাজ্য সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। এখন অবশ্য তিনি শাসকদলেরই অন্যতম মুখ। সুপ্রিম কোর্ট সিনেমাটিকে প্রেক্ষাগৃহ থেকে উঠিয়ে দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। 

এতো গেল ছবির প্রদর্শনীতে বাধা বা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ। কিন্তু,  এ দেশে এমন অনেক ছবি আছে যেগুলি সেন্সর বোর্ডের তরফে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে অথচ বিদেশে গিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এমনকি, ফিল্ম সমালোচকদেরও প্রশংসা পেয়েছে, সেইসব ছবি। 

কৌশিক মুখোপাধ্যায় ওরফে কিউ পরিচালিত ছবি ‘গান্ডু’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অনুমতি না পেলেও ২০১০ সালে, নিউ ইয়র্কে ‘সাউথ এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, ‘বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে  প্রর্দশিত হয়। এছাড়াও, শেখর কপূর পরিচালিত ‘ব্যান্ডিট কুইন’, ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শ্রীধর রঙ্গায়ন পরিচালিত ‘দ্য পিঙ্ক মিরর’, ২০০৩ সালে অনুরাগ কাশ্যপের ‘পাঞ্চ’, ২০০৪ সালে অনুরাগ কাশ্যপের ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’-এর মুক্তি নিয়ে জোর বিতর্ক হয়। ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ছবির মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

 

দুই নারীর সমকামী সম্পর্কের গল্প নিয়ে তৈরি ছবি দীপা মেহতার ‘ফায়ার’ বিতর্কের মুখে পড়ে। অভিনেত্রী শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস এবং পরিচালক দীপা মেহতা খুনের হুমকি পর্যন্ত পান। সেন্সর বোর্ডও ভারতে ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে অবশ্য দেখা যায় ছবিটি। ১৯৯৬ সালে নির্মিত ‘কামসূত্র: আ টেল অব লভ’ বিতর্কের সম্মুখীন হয়। সিনেমা থেকে একাধিক দৃশ্য বাদ দেওয়ার পর মুক্তি পায় মীরা নায়ারের এই সিনেমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − fourteen =