কলকাতা: যুদ্ধের আগুনে পুড়ে ছাড়খার গোটা ইউক্রেন৷ গত আট মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া৷ পাল্টা বুক চিতিয়ে লড়ছে জেলেনস্কির দেশ৷ যুদ্ধ থামার কোনও নাম নেই৷ বরং আক্রমণের তেজ আরও বাড়তে উদ্যত মস্কো৷ এমনকী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷ এর পর থেকেই আসন্ন যুদ্ধের আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহল৷ তবে কি ইউক্রেনকে নাস্তানাবুদ করতে পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপ করবে রাশিয়া? চলবে এক ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা? সেই আশঙ্কাই উস্কে দিল মস্কোর কাছে ঘুরপাক খাওয়া ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’। এটি যেমন তোমন কোনও ট্রেন নয়৷ এর মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র ছোড়া যায় বলেই দাবি করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্ভারে যে এমন একটি অস্ত্র রয়েছে, সে দাবি আগেও করেছিল তারা। কিন্তু কেমন দেখতে এই ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’? এর ভিতরেই বা কী কী রয়েছে?
পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের প্রসঙ্গ উঠলে সাধারণভাবে যে কথাটা মনে আসে, তার সঙ্গে কিন্তু পুতিনের নিউক্লিয়ার ট্রেনের কোনও মিল নেই৷ কারণ আকাশপথে জেটবিমান থেকে উড়ে এসে শত্রু দেশের মাটিতে আছড়ে পড়বে না সেটি। কারণ পুতিনের অস্ত্রাগারে যে ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’ রয়েছে, সেটা চলে রেলপথে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমেই আধুনিক হচ্ছে প্রযুক্তি৷ আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় অস্ত্রসম্ভারও অত্যাধুনিক হয়েছে। ব্রিটিশদের হাতে যেমন রয়েছে ‘ট্রাইডেন্ট’-এর মতো পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। তেমনই আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলির আস্তিনেও রয়েছে ভূরি ভূরি অস্ত্রের সম্ভার।
পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুশদের পরমাণু অস্ত্রসম্ভারও হয়ে উঠেছে শক্তিশালী। সোভিয়েত-যুগ থেকেই যার ভোলবদল ঘটে চলছে বলে দাবি। আরও ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরি করাই যার লক্ষ্য।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, পরমাণু অস্ত্রসম্ভার সাজিয়ে তুলতে পশ্চিমি দেশগুলি যখন বিপুল অর্থব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে তখন নিজস্ব পদ্ধতিতেই এগিয়েছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরমাণু অস্ত্রবহনের জন্য জেটবিমান বা স্যাটেলাইট রকেটের উপর ভরসা করে না থেকে পুরনো দিনের এখটি ট্রেনের উপরে ভরসা করার সাহস দেখিয়েছে তারা৷
অক্টোবরের গোড়ায় ইউক্রেনের একের পর এক শহর দখল নেয় পুতিন বাহিনী৷ সেই সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, পুতিনের ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’টি মস্কোর কাছে ঘোরাফেরা করছে৷ ওই ট্রেনটি দ্বাদশ মুখ্য অধিদফতর নামে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গোপন ইউনিটের অধীনস্থ।ক্রেমলিনের উত্তর দিকে এগোতে থাকা ওই ট্রেনটিতে একটি কামান-সহ অস্ত্রবোঝাই গাড়ি উঠতে দেখা গিয়েছে। তবে ট্রেনটির গন্তব্য ঠিক কোথায়, সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।
নিউক্লিয়ার ট্রেনটি দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ ট্রেনেরই মতো। পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে ট্রেনটি ‘আরটি-২৩ মোলোডেতস’ নামে পরিচিত। রুশ ভাষায় ‘মোলোডেতস’-এর অর্থ ‘সাহসী মানুষ’৷ তবে সাঙ্কেতিক ভাষায় নেটোর কাছে এটি পরিচিত ‘এসএস-২৪ স্ক্যালপেল’ বলে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রায় গোটা রাশিয়া জুড়ে এই ট্রেন ঘুরেফিরে বেড়ায়৷ কিন্তু একে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সে জন্যই এটি ‘ভূতুড়ে নিউক্লিয়ার ট্রেন’ বলেও পরিচিত৷
কতটা ধ্বংসাত্মকপুতিনের এই অস্ত্র? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর শক্তি এতটাই যে, আমেরিকার উপকূলবর্তী এলাকার গোটাটাই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম৷ ফাউন্ড অ্যান্ড এক্সপ্লেনড’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের দাবি, এই ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’টি দৈনিক ১,৬০৯ কিলোমিটার সফর করে৷ আশির দশকে তৎকালীন সোভিয়েতে ইউক্রেনে ইউঝনোয়ে ডিজাইন ব্যুরোর নকশা করা এই ট্রেনটি দেখতে একেবারে সাধারণ ট্রেনের মতো। এতে রয়েছে ৩টি করে লোকোমোটিভ এবং ওয়াগন। রয়েছে ৪টি রেলকার। একনজরে দেখলে মনে হবে এটি কোনও যাত্রিবাহী ট্রেন।
এর বিশেষত্ব হল, এই নিউক্লিয়ার ট্রেনটি নাকি টানা ২৮ দিন নিজে থেকেই ঘোরাফেরা করতে পারে। এমনকি, রাশিয়ার বিদ্যুৎব্যবস্থা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেলেও এর গতি কমবে না।
এই ট্রেনে রয়েছে ১০টি এমআইআরভি ওয়ারহেড (যার মাধ্যমে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব), যা থেকে ৫৫০ কিলো টিএনটি বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব। ট্রেনের মধ্যে খাড়া ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওয়ারহেডগুলি৷ যা যে কোনও চলমান জাহাজ বা ডুবোজাহাজে ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া যায়। মস্কোর সবুজ সঙ্কেত আসতেই ৩ মিনিটের মধ্যে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম এই ট্রেন।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>