নয়াদিল্লি: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি চন্দ্রযানকে রীতিমতো টক্কর দিচ্ছিল রুশ মহাকাশযান লুনা-২৫৷ কে আগে চাঁদের মাটি ছোবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছিল উৎকন্ঠা? চাঁদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল রাশিয়ার লুনা-২৫। আর একটা ধাপ পেরোলেই চাঁদের সবচেয়ে কাছের কক্ষপথে ঢুকে পড়ত সে। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল বিপত্তি। সর্বশেষ কক্ষপথে নামার আগে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র সম্মুখীন হয় লুনা-২৫। এর ফলে নির্দিষ্ট পরিমাপ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি৷
যান্ত্রিক গোলযোগ যে তৈরি হচ্ছে, সেই অশনি সঙ্কেত মিলেছিল আগেই। আশঙ্কাই সত্য করেই চাঁদের বুকে ভেঙে পড়ে রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা-২৫ প্রোব৷ প্রায় ৫০ বছর পর চন্দ্রাভিযানে নামে রাশিয়া৷ কিন্তু, সাফল্য ধরা দিল না। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের ঠিক আগে ভেঙে পড়ল রুশ চন্দ্রযান। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমোস রবিবার একটি বিবৃতিতে লুনা-২৫ এর দুর্ঘটনার কথা জানায়।
রসকসমোসের তরফে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ২ট বেজে ৫৭ মিনিটে লুনা-২৫ এর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওই মহাকাশযানের আর অস্তিত্ব নেই। চাঁদের বুকে ভেঙে পড়েছে লুনা-২৫৷ অবতরণের আগে কক্ষপথ থেকে নামানোর প্রস্তুতি চলার মাঝেই ঘটে যায় বিপত্তি৷ অনিশ্চিত কক্ষপথে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার এই মহাকাশযান। তবে এখনও পর্যন্ত মহাকাশযানটির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করাও সম্ভব হয়নি৷ এই বিষয়ে রাশিয়ার তরফে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি জারি করা হলেও, লুনা-২৫ রাশিয়াকে বড়সড় ধাক্কা দিল, বলেই মত আন্তর্জাতিক মহলের।
চাঁদের মাটিতে লুনা আছড়ে পড়ায়, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়ের যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে চন্দ্রযান-৩, তা অটুট রইল৷ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের ঠিক আগেই রাশিয়ার মহাকাশযানে যান্ত্রিক গোলযোগ ঘটে৷ তখন থেকেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছিল রসকসমোস। শেষ পর্যন্ত লুনা-২৫ কে রক্ষা করতে পারেননি তাঁরা৷ তবে ঠিক কী যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছিল, অবতরণের প্রাক মুহূর্তে কী ভাবে তা ভেঙে পড়ল, সেসব প্রশ্নের এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি। লুনা-২৫ এর ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। সব দিক খতিয়ে দেখার পরই এ বিষয়ে বিশদে জানাতে পারবেন তারা৷
সোভিয়েত জমানার ইতিহাসকে পিছনে ফেলে চন্দ্রাভিযানে নতুন ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে লুনা-২৫-কে চাঁদের পথে পাঠায় মস্কো৷ ৮০০ কেজি ওজনের এই চন্দ্রযানকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করাতে চেয়েছিলেন রুশ বিজ্ঞানীরা৷ পালকের মতো সফট ল্যান্ডিং করানোর আগেই শেষ হয়ে যায় রসকসমোসের চন্দ্রযান। আপাতত একই প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান-৩৷ তবে সব ঠিক থাকলে, চন্দ্রযান-৩এর আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়ে ফেলত লুনা ২৫৷ কিন্তু, তীরে এসেও তরী ডুবল রাশিয়ার৷
১৯৮৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ফোবোস-২ মহাকাশযানকে পাঠিয়েছিল চাঁদের পথে। চাঁদের পাশাপাশি মঙ্গলেও অনুসন্ধান চালানোর দায়িত্ব ছিল ফোবোস-২ এর৷ কিন্তু সেই অভিযানও সফল হয়নি। তার পর থেকে আর চন্দ্রাভিযানের উদ্যোগ নেয়নি রাশিয়া। ফলে লুনা ২৫- এর সাফল্যের আশায় বুক বেঁধেছিলেন রুশ বিজ্ঞানীরা৷ মাত্র ১১ দিনেই সেটি চাঁদে পা রাখবে বলে ঘোষণা করে রসকসমোস। হিসাব মতো সোমবারই চাঁদে অবতরণের কথা ছিল লুনা-২৫-এর। তবে তার আগেই সব শেষ৷ যদিও লুনা-২৫ এর সাফল্যের সম্ভাবনা যে ৭০ শতাংশ, সে কথা ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দিয়েছিলেন রসকসমোসের প্রধান ইউরি বরিশভ।