এক কালে এখানে বইত নদী, হ্রদ, ছিল জঙ্গল! আন্টার্কটিকায় বরফের চাদর সরাতেই মিলল আশ্চর্য তথ্য

এক কালে এখানে বইত নদী, হ্রদ, ছিল জঙ্গল! আন্টার্কটিকায় বরফের চাদর সরাতেই মিলল আশ্চর্য তথ্য

river

কলকাতা: প্রকৃতি বরাবরই খামখেয়ালি৷ কখন সে কী করে বসে , তা বোঝা দায়৷ কখনও শান্ত, কখনও ভয়ঙ্কর৷ প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার খেলাতেই বদলে গিয়েছে পৃথিবীর রূপ৷ জানেন কি আজ যেখানে বরফের চাদর, এক কালে সেখানেই ছিল একাধিক নদী, উপত্যকা৷ ছিল গভীর জঙ্গল? হ্যাঁ, এমনটাই দাবি করছেন, এক দল গবেষক। রীতি মতো চমকে দেওয়ার মতো তথ্য তুলে ধরেছেন তাঁরা৷ গবেষকরা বলছেন, যে আন্টার্কটিকা পুরু সাদা বরফের আস্তরণে ঢাকা, যেখানে সবুজের কোনও অস্তিত্ব নেই, সেখানেই ছিল সবুজ গাছ৷ ছিল না বরফের আস্তরণ! 

টেনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল এই গবেষণাটি চালিয়েছে। উপগ্রহের সংগৃহীত তথ্য এবং রেডিয়ো-ইকো শব্দ প্রযুক্তিতে হাতিয়ার করে বরফের চাদরের নীচে ঢাকা পড়ে থাকা ৩২ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গবেষণা চালান তাঁরা।

ভারত মহাসাগর সংলগ্ন পূর্ব আন্টার্কটিকার উইলকিস ল্যান্ড অঞ্চলে মূলত এই গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণার পর একেবারে হতবাক গবেষণকরা৷ তাঁরা বলছেন, বেলজিয়ামের সমান এই এলাকায় এককালে না কি ছিল৷ প্রকৃতি উজার করে সাজিয়েছিল আন্টার্কটিকাকে৷ সেখানে ছিল নদী, জঙ্গল, শৈলশিরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই অঞ্চলেই সুপ্ত রয়েছে কোটি কোটি বছরের পুরনো অতীত।

পূর্ব আন্টার্কটিকার ওই অঞ্চলের ভূমিরূপ পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা দেখেন, আন্টার্কটিকার ভূমিরূপ গঠন করেছে নদী। আর সেটা প্রায় এক কোটি ৪০ লক্ষ বছর আগে। যার অর্থ, আজ থেকে প্রায় দেড় কোটি বছর আগে আন্টার্কটিকার উপর দিয়েই প্রবাহিত হত নদী। সেই নদীর বুকে সঞ্চিত পলি, বালি দিয়েই গঠিত হয়েছিল আন্টার্কটিকার ভূমিরূপ। গবেষকরা জানিয়েছেন, বরফ ঢাকা আন্টার্কটিকায় এক সময় ছিল নদী উপত্যকা, শৈলশিরা। তার যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। ব্রিটেনের উত্তর ওয়েলসে যে ধরনের ভূমিরূপের দেখা মেলে, তার সঙ্গে আন্টার্কটিকার ভূমিরূপের অনেকটাই মিল রয়েছে।

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট জেমিসন জানিয়েছেন, আন্টার্কটিকার ভূমিরূপ নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি গবেষণা হয়েছে মঙ্গলের ভূমিরূপ নিয়ে। খুব স্বভাবতই আন্টার্কটিকার ভূমিরূপ নিয়ে তাই নেক কম তথ্য রয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে। 

ব্রিটেনের নিউ কাস‌্ল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিল রসের কথায়, বছরের পর বছর আন্টার্কটিকার এই ভূমিরূপ সাধারণ মানুষ, অভিযানকারীদের চোখের আড়ালে থেকে গিয়েছে। অথচ পূর্ব আন্টার্কটিকার এই অংশেই রয়েছে অতীত ইতিহাসের কাহিনী। ভবিষ্যতে জলবায়ু কী ভাবে পরিবর্তিত হবে, তারও ইঙ্গিত রয়েছে এখানে৷  বরফের চাদর সরিয়ে দেখা গিয়েছে, পূর্ব আন্টার্কটিকায় এক কালে ছিল পর্বতশ্রেণি, খাড়ি এমনকি ছিল হ্রদ। সে সবই এখন বরফের নীচে স্মৃতি। আরও অনেক কিছুই ছিল সেখানে৷ যদিও গবেষকেরা জানিয়েছেন, এখনও সবটা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ ‘সার্চ কন্টিনিউ’৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + four =