কলকাতা: মিনিটে মিনিটে খিঁচুনি হচ্ছিল রোগীর। একটানা ১৪ দিন ধরে ভায়াবহ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থরথর করে কাঁপছিলেন বছর ৪৫-এর ওই মহিলা৷ সারা শরীরে লাল দাগ৷ লুপাস রোগে আক্রান্ত বারাসতের ওই বাসিন্দা। যতবারই খিঁচুনি হচ্ছে, সমস্ত স্বাস্থ্যসূচক ভেঙে যাচ্ছে। ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হচ্ছে চিকিৎসকরা। খিঁচুনি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। মৃতপ্রায় সেই মহিলাকে নতুন জীবন দিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার৷ চমৎকার করে দেখালেন চিকিৎসকরা৷ কৃত্রিমভাবে কোমায় পাঠিয়ে জীবন বাঁচালেন তাঁর৷
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের প্রধান ডাঃ সুগত দাশগুপ্ত বলেন, ওই রোগী লুপাস উইথ সিএনএস ভাসকুলাইটিসে আক্রান্ত। লুপাস কোনও বিরল রোগ নয়। তবে এর জন্য মানুষকে জীবনভর ভুগতে হয়৷ নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। এই ক্ষেত্রে ওই মহিলার অত্যন্ত জটিল ধরনের লুপাস হওয়ায় প্রাণসংশয় তৈরি হয়। অঙ্গবৈকল্য বা স্ট্রোকের জন্য নয়, বারবার খিঁচুনি হওয়ায় তিনি প্রায় মৃত্যুর দোরগোড়ায় চলে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা চালানো যাচ্ছিল না৷ বাধ্য হয়েই রোগীকে কোমাচ্ছন্ন করে, চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় আমাদের।
১০ এপ্রিল জ্বর হয় ওই মহিলার৷ বাড়িতেই ওষুধ খেয়ে জ্বর কমে৷ ১৪ তারিখ থেকে খিঁচুনি শুরু হয়৷ স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরেন৷ এর পর তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে৷ এর পরেই ওই মহিলাকে আর জি কর-এ ভর্তি করা হয়। দু’দিন চিকিৎসার পরেও অবস্থার উন্নতি না-হওয়ায় ২০ তারিখে তাঁকে সিসিইউতে পাঠানো হয়। তখন তাঁর সংজ্ঞা নেই৷ ক্রমাগত খিঁচুনি হতে থাকায় ডাকা হয় নিউরোলজির চিকিৎসক ধীমান দাসকে। বারবিটিউরেট নামক এক ধরনের ওষুধ দিয়ে রোগীকে কোমাচ্ছন্ন করে চিকিৎসা শুরু হয়। দু’সপ্তাহ ভেন্টিলেশনে এবং সব মিলিয়ে ২০ দিন চিকিৎসার পর হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন তিনি।